পদ্মা সেতুতে বসছে রেলপথ, সহজ হবে ঢাকা - যশোর যোগাযোগ - যশোর নিউজ - Jessore News

Breaking

Post Top Ad


Post Top Ad

Responsive Ads Here

Saturday, August 20, 2022

পদ্মা সেতুতে বসছে রেলপথ, সহজ হবে ঢাকা - যশোর যোগাযোগ

 


যশোরের হাসান ওয়ালী ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তার মতে, পদ্মা সেতুর রেল প্রকল্প শেষ হলে যশোরের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। তিনি  বলেন, ‘পদ্মা সেতু দিয়ে রেল যোগাযোগের অপেক্ষায় আছি আমরা যশোরবাসী। রেল প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে। এখন যশোর থেকে ট্রেনে ঢাকায় যেতে ১০ ঘণ্টা লাগে, পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে রেল সংযোগ হলে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টায় আসা-যাওয়া করা যাবে।’

তিনি বলেন, ‘শুধু ব্যক্তি যোগাযোগই নয়, ব্যবসা-বাণিজ্যেও নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। চাইলে যশোর থেকে ঢাকায় গিয়ে অফিস করে আবার যশোরে ফেরা যাবে। এমন কথা আগে কল্পনাও করা যায়নি। পদ্মা সেতুতে রেল লিংক হচ্ছে বলেই এরকম ভাবা সম্ভব হচ্ছে।’

শুধু যে হাসান ওয়ালী এমন ভাবছেন তা নয়, পদ্মা সেতু দিয়ে রেল চললে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ত্রিমাত্রিক (সড়ক, নৌপথ ও রেল যোগাযোগ) যোগাযোগের যুগে প্রবেশ করবে। তখন হাসানের মতো পুরো দেশের লোক পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগের সুবিধা পাবে।

পদ্মা সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়েছে গত জুনে। এখন সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচলের অপেক্ষায় আছে পুরো দেশ।

পদ্মা সেতুসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আগামী বছরের জুনে পদ্মা সেতু দিয়ে রেল চলাচল শুরুর লক্ষ্যে কাজ চলছে। এ মাসেই (আগস্টে) সেতুর ওপর রেললাইন বসানোর কাজ শুরু হবে। রেললাইন বসানোর সময় পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন বন্ধ থাকবে না। রেললাইন বসানোর বেশিরভাগ কাজ হবে রাতের বেলায়। ট্র্যাক বসানোর জন্য সেতুর ওপর গাড়ির গতি কিছুটা কমানো হতে পারে। প্রথমে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালু হবে।

পদ্মা সেতু ও এর দুই প্রান্তে রেললাইন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৮ সালে। প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল ২০১৬ সালে। শুরুতে যানবাহন চলাচলের সঙ্গে একই দিনে রেল চালুর পরিকল্পনা ছিল সরকারের। কিন্তু রেললাইন বসানোসহ সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো নির্মাণের কাজ পিছিয়ে আছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে সরকারের সেতু বিভাগ। সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল নিশ্চিত করার দায়িত্ব বাংলাদেশ রেলওয়ের।

ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেললাইন বসানো এবং স্টেশন ও অন্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য আলাদা প্রকল্প নেয় রেলওয়ে। জিটুজি পদ্ধতিতে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে চীন। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। রেল সংযোগের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। গত ৪ আগস্ট পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা থেকে মাওয়া অংশের কাজ ৬২ শতাংশ শেষ হয়েছে। মাওয়া থেকে ভাঙ্গা অংশের কাজ হয়েছে ৮১ শতাংশ। ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অংশের কাজ হয়েছে ৫২ শতাংশ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা সেতুর রেল প্রকল্পের কাজ সব অংশে পুরোদমে চলছে। কাজ নিয়ে ব্যস্ত এ প্রকল্পের শ্রমিকরা। বিভিন্ন স্টেশন নির্মাণের কাজও চলছে। চলছে রেললাইন বসানোর কাজ। পদ্মা সেতু দিয়ে রেললাইন (ট্র্যাক) আনা হচ্ছে মাওয়া প্রান্তে।

পদ্মা সেতুর রেল প্রকল্পে কর্মরত মো. হাশেম নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘আমার বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা এলাকায়। জানি এ সেতুর ফলে কত উপকার হয়েছে আমাদের। পদ্মা সেতুর কাজেও ছিলাম। এখন রেলের কাজে আছি। এত বড় প্রকল্পের কাজ করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে হয়। আমি একা নই, যারা এখানে কাজ করে তাদের সবাই মনে করে দেশের জন্যই কাজ করছি।’ দিনে রাতে সবসময় কাজ চলে বলে জানান তিনি।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজালুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ প্রকল্পের কাজের গতি অনেক বেড়েছে। ঢাকা থেকে মাওয়া অংশের কাজ ৬২ শতাংশ, মাওয়া থেকে ভাঙ্গার কাজ ৮১ শতাংশ আর ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অংশের কাজ শেষ হয়েছে ৫২ শতাংশ। এ মাসেই পদ্মা সেতুর ওপর রেললাইন বসানোর কাজ শুরু হবে। যানবাহনের চলাচল বন্ধ না করেই কাজ চলবে সেতুতে। রাতে বেশিরভাগ সময় কাজ চলবে। তখন গাড়ির গতি কিছুটা কমানো হতে পারে। আগামী বছরের জুনে ঢাকা থেকে ভাঙ্গায় রেল চালানোর লক্ষ্যে কাজ এগিয়ে চলছে।’

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বুয়েটের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান  বলেন, ‘পদ্মা সেতুর ফলে যোগাযোগের ত্রিমাত্রিক যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। এর সুবিধা শুধু ওই এলাকার মানুষই নয়, পুরো দেশ পাবে। বর্তমানে খুলনা, যশোরসহ দেশের পশ্চিমাঞ্চলের অনেক জেলায় রেল যোগাযোগ আছে। তবে ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজ হয়ে ওইসব এলাকায় যেতে হয়। ঢাকা থেকে খুলনার দূরত্ব ৩৮১ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু দিয়ে যে রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে, তাতে ঢাকা থেকে খুলনার দূরত্ব ২১২ কিলোমিটার কমে যাবে। এখন রেলওয়ের হিসাবে, আন্তঃনগর ট্রেনে ঢাকা থেকে খুলনা যেতে সময় লাগে ১১ ঘণ্টা। পদ্মা সেতু হয়ে যে রেললাইন করা হচ্ছে তাতে উচ্চগতির ট্রেন চালানো সম্ভব। ফলে খুলনা-যশোরে চার ঘণ্টার মধ্যে যাওয়া সম্ভব। এ যোগাযোগের ফলে মোংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে খুব সহজে পণ্য ঢাকায় আনা যাবে, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও নেওয়া যাবে। ব্যবসা-বাণিজ্য বেশ সম্প্রসারিত হবে। দেশের জিডিপি ১.২৩ শতাংশ বাড়বে।’

তিনি বলেন, ‘রেল যাত্রী আনা-নেওয়া করে তেমন লাভবান হতে পারে না; পদ্মা সেতু দিয়ে রেল-কার্গোর মাধ্যমে পণ্য আনা-নেওয়া করে অনেক লাভবান হতে পারবে। আর রেল হলো আরামদায়ক, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী বাহন। পদ্মা সেতু দিয়ে রেল চালু হলে ঢাকার প্রবেশমুখে এখন যে যানজট লেগে থাকে তাও অনেকাংশে কমবে। রেলে যাতায়াতের ফলে সড়ক দুর্ঘটনাও আগের চেয়ে কমে যাবে।’

Post Top Ad

Responsive Ads Here