যশোরে অকেজো পাটের আঁশ ছাড়ানো ৫৩০ রিবন মেশিন - যশোর নিউজ - Jessore News

Breaking

Post Top Ad


Post Top Ad

Responsive Ads Here

Thursday, August 25, 2022

যশোরে অকেজো পাটের আঁশ ছাড়ানো ৫৩০ রিবন মেশিন

 


পর্যাপ্ত পানির অভাবে যশোরে পাট জাগ দিতে না পারলেও রিবন রেটিং পদ্ধতিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না চাষিরা। ফলে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পাটের আঁশ ছাড়ানোর নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলেও তা কাজে আসেনি। বিশেষ করে রিবন রেটিং পদ্ধতির মাধ্যমে আঁশ ছড়ানোর জন্য বিপুল অঙ্কের টাকা ব্যয় করেও মাঠপর্যায়ে কার্যকর করতে পারেনি কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে দু’দফায় এক হাজার ৫৩০টি রিবন রেটিং মেশিন দেয়া হলেও এর মধ্যে ৫৩০টি মেশিন প্রায় এক যুগ ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে।

জানা যায়, চলতি মৌসুমেও পর্যাপ্ত পানির অভাবে যশোর জেলায় প্রায় ২৫ শতাংশ চাষিই এখনও পাট কেটে জাগ দিতে পারেননি, যে কারণে প্রতিবছর লোকসানের শিকার যশোর অঞ্চলের পাটচাষিরা আগ্রহ হারাচ্ছেন পাট চাষে। মূলত পানির অভাবে যেসব এলাকায় উৎপাদিত পাট পচানো সমস্যা হয়, সেখানকার জন্য রিবন রেটিং বা পাটের ছালকরণ ও পচন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট। ইনস্টিটিউটের দাবি, এ পদ্ধতিতে পাটের ছাল পচানোর জন্য পানি, জায়গা ও সময় কম লাগে, আঁশে কাটিং হয় না, আঁশের মান ভালো হয়, এ গ্রেডের আঁশ পাওয়া যায়, মূল্যও বেশি পাওয়া যায়, পরিবহন খরচ কম লাগে, স্বাস্থ্যকর ও পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা ও পদ্ধতিটি অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক, পাটখড়ি শক্ত থাকে বলে জ্বালানি ও বিভিন্ন কাজে ব্যবহারে টেকসই এবং সুবিধাজনক। তবে পাটচাষিদের দাবি, এ পদ্ধতিতে পাট পচাতে খরচ বেশি হয়। পাশাপাশি পাটের রং ঠিক না থাকায় আশানুরূপ দাম পাওয়া যায় না।

যশোর জেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর যশোর জেলায় ২৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ২৪ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে এবং এরই মধ্যে ৭৫ শতাংশ জমির পাট কেটে কৃষক জাগ দেয়ার চেষ্টা করছেন। বাকি ২৫ শতাংশ জমির পাট ক্ষেতেই পড়ে আছে। এ অবস্থায় এসব ক্ষেতের পাট কৃষক আদৌ কাটবেন কি না, তা নিয়ে তারা দোটানায় রয়েছেন। চাহিদামতো বৃষ্টি না হওয়ায় ছোট-বড় খাল-বিলসহ বিভিন্ন ডোবা ও নালার পানি শুকিয়ে যাওয়ায় প্রান্তিক চাষিরা পাট কাটতে পারছেন না। অনেকেই আবার ভারী বৃষ্টির আশায় পাট কেটে ক্ষেতে ফেলে রেখেছেন। 

ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা জানান, এ বছর পাট চাষের উপযুক্ত সময়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় তারা সেচনির্ভর হয়ে পড়েন, যে কারণে তাদের বিঘাপ্রতি আট থেকে ১০ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। এরপর পাট কেটে জাগ দেয়ার উপযুক্ত সময়ে এসে পানির অভাবে তারা পুরোটাই লোকসানের কবলে পড়েছেন।

এদিকে পাটের আঁশ ছড়ানোর জন্য সরকার যশোর জেলায় ৫৩০টি আঁশ ছড়ানো রিবন রেটিং মেশিন দিলেও সেটি দীর্ঘ ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে অকেজো অবস্থায় নষ্ট হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২০১০ সালে সরকার যশোর জেলার আট উপজেলার কৃষকদের জন্য ৮০০টি এবং ২০১১ সালে ৭৩০টি পাটের আঁশ ছড়ানোর রিবনার মেশিন সরবরাহ করে। পাটগাছ থেকে আঁশ ছাড়িয়ে স্বল্প পানিতে তা পচানোর জন্য এ পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়। এজন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ সরকার ৫৬ লাখ টাকা ভর্তুকিও দেয়। তবে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সেটি মাঠপর্যায়ে জনপ্রিয় করতে তুলতে পারেননি আজও। ফলে এসব রিবন রেটিং মেশিনগুলো এখন উপজেলা কৃষি অফিস ও ইউনিয়ন পরিষদের কক্ষে পড়ে নষ্ট হচ্ছে।

জেলার দক্ষিণ শ্রীরামপুর গ্রামের চাষি রিপন হোসেন বলেন, প্রতিবছরই পাট চাষ ও কাটার উপযুক্ত সময়ে এসে পানির জন্য বড় ধরনের সংকটে পড়তে হয়। এছাড়া রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাটের আঁশ পচাতে অতিরিক্ত ১২-১৫ জন শ্রমিক লাগে। ফলে বিঘাপ্রতি বাড়তি খরচ হয় সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা। সে কারণে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আঁশ ছড়ানোর মেশিন দেয়া হলেও তা বেশি দিন টেকেনি। কৃষি বিভাগ থেকে এর চেয়ে আধুনিক যন্ত্র আবিষ্কারের কথা বলা হলেও এই দীর্ঘদিনে তা বাস্তবায়িত হয়নি।

একই এলাকার চাষি আব্দুর রহমান বলেন, এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় কোথাও পাট জাগ দেওয়ায় মতো পর্যাপ্ত পানি নেই। সেচ দিয়ে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। এ বছর পাটের বাজারদর কম হয়ে গেলে আমাদের পথে বসা ছাড়া উপায় থাকবে না। এ অবস্থায় পাট পচানো বিকল্প কোনো পথ থাকলে আমরা বেঁচে যাতাম। তিনি বলেন, রিবন রেটিং পদ্ধতিতে আঁশ ছাড়ানোর পর পাটকাঠি কাজে লাগানো যায় না। রিবন রেটিং মেশিন দিয়ে আঁশ ছাড়িয়ে পাট পচানো ঝামেলার কাজ। পাটের বীজ বপন থেকে শুরু করে আঁশ ছাড়িয়ে ঘরে তোলা পর্যন্ত সনাতন পদ্ধতিতে যেখানে ১৮ থেকে ২০ জন শ্রমিক লাগে, সেখানে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে ৩০ থেকে ৩২ জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। এ পদ্ধতিতে সনাতন পদ্ধতির চেয়ে প্রতি বিঘায় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়।

তিনি জানান, কৃষি বিভাগ আগে যে রিবন রেটিং মেশিন আবিষ্কার করেছিল, সে পদ্ধতিও বেশ জটিল ছিল। তাতে বেশি খরচ হওয়ায় আমরা সহজ পদ্ধতি আবিষ্কারের দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কৃষি বিভাগ। 

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হক বলেন, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কৃষকরা পাট আবাদ নিয়ে কিছুটা সমস্যায় পড়লেও আপাতত মাঝে মাঝে বৃষ্টি নামায় আশাবাদী তারা। তিনি বলেন, আমাদের হিসাবমতে জেলার মোট জমির ৭৫ শতাংশ পাট কেটে জাগ দেয়া হয়েছে। বাকি ২৫ শতাংশ জমির পাট কয়েক দিনের মধ্যে কাটা হবে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে কৃষক সংকট থেকে মুক্ত হবে বলে তিনি আশা করেন।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে এ কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এর আগে সরকার পাটের আঁশ ছড়ানোর জন্য রিবন রেটিং মেশিন সরবরাহ করেছিল বটে, তবে সেটি খরচ বেশি হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা গ্রহণ করেননি। যে কারণে এর বিকল্প সহজ কোনো পদ্ধতি উদ্ভাবন করা যায় কি না, সেটি পাট গবেষণা কেন্দ্রের গবেষকরা উদ্ভাবনের চেষ্টা করছেন।

Post Top Ad

Responsive Ads Here