যশোরে এক সপ্তাহে অন্তত ১২ জন গলায় ফাঁস ও কীটনাশকপানে আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে পুলিশ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী ও গৃহবধূ রয়েছেন। এদের মধ্যে আটজনই নারী। করোনাকালীন সংকটে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। পারিবারিক কলহ, আর্থিক সংকট ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে তারা আত্মঘাতী হয়েছেন। তাদের অধিকাংশই নিম্নমধ্যবিক্ত ও নিম্নআয়ের পরিবারের সদস্য।
এ প্রসঙ্গে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সাইকো সোস্যাল কাউন্সিলর মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, মনের সঙ্গে লড়াই করে পরাজিত হলেই একজন মানুষ আত্মহত্যা করে। হতাশা থেকেই মানুষ আত্মঘাতী হয়। কোভিড-১৯ প্রভাবে চারপাশে মানুষের মাঝে হতাশা বেড়েছে। ব্যক্তি শ্রেণিভেদে হতাশার চিত্র আরও প্রকট। হতাশা থেকেই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে।
এ প্রসঙ্গে যশোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, একজন উপপরিদর্শক অসুস্থতা ও পারিবারিক কলহের জেরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। পাঁচদিন পর ১২ জুন রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তবে জেলায় হঠাৎ করেই আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে, এটি ঠিক নয়। আগের মতোই আছে পরিস্থিতি। সচেতনতা বাড়াতে আমরা মোটিভেশন প্রোগ্রাম করছি।
জানা যায়, সর্বশেষ ১২ জুন দিবাগত রাত ১টার দিকে খুলনার শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন যশোর পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম। শারীরিক অসুস্থতা ও পারিবারিক অশান্তির জেরে তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ৪ জুন ঝিকরগাছা উপজেলার মাগুরা গ্রামের নারায়ন চন্দ্রের স্ত্রী সাধনা রানী (৬০) কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করেন। ৫ জুন একইদিনে চারজন গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তারা হলেন যশোর সদরের হৈবতপুর ইউনিয়নের কেসমত গ্রামের ইউসুব উদ্দিনের মেয়ে সানজিদা আক্তার (১৬), শহরের নীলগঞ্জ তাঁতীপাড়ার ফয়সাল আহমেদ সুজনের ইতি খাতুন (২০), ভায়না গ্রামের মৃত মোজ্জাম্মেল হকের ছেলে ইমামুল হক (৪৫) ও মণিরামপুর উপজেলার ঢাকুরিয়া গ্রামের আব্দুল আজিজ মোল্লার ছেলে হারুনার রশিদ (৪৫)। ৬ জুন যশোরের অভয়নগর উপজেলার দেয়াপাড়া গ্রামের আব্বাস মোল্লার ছেলে ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম (২৫) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। ৭ জুন যশোর সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের জিরাট গ্রামের মনোয়ারা খাতুন (৭০) ও ডাকাতিয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী সাজেদা খাতুন (৩৩) গলায় ফাঁস ও কীটনাশকপানে আত্মহত্যা করেন। ৯ জুন গলায় ফাঁস দিয়ে বাঘারপাড়া উপজেলার রায়পুর গ্রামের সাহিদুল ইসলামের মেয়ে উর্মি খাতুন (২১) ও অভয়নগর উপজেলার পাঁচকবর গ্রামের নাসিম হোসেনের মেয়ে শামীমা খাতুন (১৩) আত্মহত্যা করেন। ১০ জুন শার্শার গোগা ইউনিয়নের হরিশচন্দ্র পুর গ্রামের এরশাদ আলীর স্ত্রী জান্নাতী খাতুন (২৫) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। ১২ জনের মধ্যে আটজনই নারী রয়েছেন।
নারীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি হওয়া প্রসঙ্গে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সাইকো সোস্যাল কাউন্সিলর মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে পুরুষরা বাড়িতে থাকছে। তাদের আয় কম হওয়ায় মেজাজ খিটমিটে হয়েছে। সেই মেজাজটা তারা নারীদের উপর দেখাতে পারে। এতে সাংসারিক অশান্তি হয়। আর নারীরা এমনিতেই একটু বেশি আবেগপ্রবণ। এইসব কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটতে পারে।
তিনি আরও বলেন, হতাশার কথাগুলো আশপাশের কারো সাথে খোলামেলা আলোচনা করলে সমাধান সম্ভব। আত্মহত্যা কোনো সমাধান হতে পারে না। কাউন্সিলিং বৃদ্ধি করতে প্রাতিষ্ঠানিক ও জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে।