করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে রয়েছে যশোর জেলার সাড়ে ৭’শ গ্রাম পুলিশ সদস্য। আর ঝুঁকির মধ্যেই জেলার ৯৩টি ইউনিয়নে তারা পুলিশের পাশাপাশি এলাকায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে দিনরাত কাজ করছেন।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর বাড়ি লকডাউন ও তাদের বাজারও করে দিতে হচ্ছে গ্রাম পুলিশ সদস্যদেরকে। অথচ সরকারিভাবে তাদের বাড়তি কোনো টাকা দেওয়া হচ্ছে না। ব্যক্তিগত সুরক্ষার কোন সামগ্রী তাদেরকে দেওয়া হয়নি বলে জানায় গ্রাম পুলিশের সদস্যরা। এমনকি তারা তেমন খাদ্য সহায়তা পর্যন্ত পাচ্ছেন না।
গ্রাম পুলিশ সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যশোর জেলার ৯৩টি ইউনিয়নে কর্মরত রয়েছে সাড়ে ৭শ গ্রাম পুলিশ। ইউনিয়নে মানুষ যাতে কোনো কাজ ছাড়া বাইরে না আসে। পুলিশের সাথে গ্রাম পুলিশ সদস্যরা সকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কাজ করছেন। রাতদিন ঝুঁকির মধ্যেই পুলিশের পাশাপাশি কাজ করছেন গ্রাম পুলিশ। নেই ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সুরক্ষা সামগ্রী, বাড়তি আর্থিক সুবিধা। আক্রান্ত রোগীর বাড়ি লকডাউন, বাজার করছেন সদস্যরা
কোন মানুষ যদি বাইরের এলাকা থেকে আসে বা কোনো মানুষ করোনায় আক্রান্ত হন তখন তার বাড়ি লকডাউন করতে হচ্ছে তাদের। পাশাপাশি ওই রোগীর বাড়ির বাজার করে দিতে হচ্ছে। এজন্য তারা কোনো বাড়তি আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন না।
করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষায় কোনো ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) পোশাক বা হ্যান্ড গ্লাবস তাদের দেওয়া হয়নি। শুধু মুখে মাস্ক পরে তারা এ কাজ করছেন। এতে তারা করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জানান কয়েকজন গ্রাম পুলিশের সদস্য।
জেলা গ্রাম পুলিশের সহসভাপতি ও সদর উপজেলা গ্রাম পুলিশের সভাপতি জামিল খান জানান, গ্রাম পুলিশের সদস্যরা এলাকায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য পুলিশের সাথে কাজ করছেন। কোনো মানুষ করোনায় আক্রান্ত হলে তার বাড়ি লকডাউন করতে হচ্ছে। পাশাপাশি ওই রোগীর বাড়ির বাজারও করে দিতে হচ্ছে। কিন্তু সরকারিভাবে বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোনো পিপিই, হ্যান্ড গ্লাবস দেওয়া হয়নি। অথচ গ্রাম পুলিশের সদস্যরা দিনরাত কাজ করছেন। এজন্য তাদের কোনো বাড়তি টাকা দেওয়া হচ্ছে না। সরকারিভাবে ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যে সীমিত বেতন পাই সেই টাকা দিয়ে কোন রকমভাবে সংসার চালাতে হচ্ছে।
জেলা গ্রাম পুলিশের ঝুঁকিপূর্ণ ভাতার দাবি জানিয়েছেন জেলা গ্রাম পুলিশের সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম ঝন্টু। বসুন্দিয়া ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ ইমরান হোসেন জানান, আমরা করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে থেকেও শুধুই কাজ করছি। অথচ আমরা তেমন খাদ্য সহায়তা পাচ্ছি না।
সদরের উপশহর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসানুর রহমান লিটু জানান, গ্রাম পুলিশের সদস্যদের সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা করা হচ্ছে না। আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করা হচ্ছে।
নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসরিন সুলতানা খুশি জানান, গ্রাম পুলিশের সুরক্ষার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাস্ক ও হাত ধোঁয়ার জন্য সাবান, হ্যাস্কিসল দেওয়া হচ্ছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, গ্রাম পুলিশের সদস্যদের মুখে মাস্ক ও হাতে হ্যান্ড গ্লাবস থাকতে হবে। তাদের সুরক্ষার জন্য পিপিই দেওয়ার জন্য চেয়ারম্যানদের বলে দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ জানান, গ্রাম পুলিশের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে তাদের সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবস্থা করা হবে।