যশোরে করোনা প্রতিরোধে দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী - যশোর নিউজ - Jessore News

Breaking

Post Top Ad


Post Top Ad

Responsive Ads Here

Monday, April 20, 2020

যশোরে করোনা প্রতিরোধে দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী

যশোরে করোনার প্রভাবে চলতে থাকা লকডাউনে ঘরবন্দি জীবনে কর্মহীন, শ্রমজীবী, দরিদ্র ও দুস্থদের টান পড়েছে পেটে। সামান্য আয় রোজগারেরও জো নেই। চরম বিপাকে হাসফাঁস অবস্থা খেটে খাওয়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর।

তাদের দূয়ারে কান পাতলেই ভেসে আসে হাহাকার আর আর্তনাদ। প্রাণঘাতী করোনা যেন যাপিত জীবনে নিয়ে এসেছে ঘোর অমানিষার অন্ধকার।

সঙ্কটময় এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে, আঁধার কাটাতে অতি দরিদ্র এসব মানুষের পাশে থাকার সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার। এগিয়ে আসছে সামাজিক-স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও।

চরম অভাবের জীবনে নিম্নবিত্তের কাছে কাঙ্খিত ত্রাণই যেন আবির্ভূত হচ্ছে ত্রাতারূপে। অবশ্য এই ত্রাণ নিয়ে বিশৃঙ্খলা বা লঙ্কাকান্ডের শেষ নেই।

কোন স্থানে ত্রাণ বিতরণ হলেই পরোয়া করা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্বের রীতি-নীতির। খাদ্য সঙ্কটে কোথাও কোথাও বেঁধেছে লড়াই।

কঠিন এমন বাস্তবতায় কেবলমাত্র সামাজিক দূরত্ব ও হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখতে পারেনি সরকারের নির্দেশে দেশজুড়ে মাঠে থাকা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

তারই ধারাবাহিকতায় করোনা জীবাণুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে অশান্ত ও অস্থির সময়ে প্রতিনিয়তই স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে উঠছেন যশোর সেনানিবাসের  (৫৫ পদাতিক ডিভিশন)সেনা সদস্যরা। দিন যতো গড়াচ্ছে তাদের কাজের স্টাইলও যেন পাল্টে যাচ্ছে।কোন জনসমাগম নয়, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন গৃহবন্দী জীবন যাপনের শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়াটাই এখন তাদের ‘রুটিন ওয়ার্ক’।

হুড়োহুড়ি বা শোডাউন প্রবণতার বাইরে গিয়ে তারা গরিব ও দুস্থদের ত্রাণের প্যাকেট পৌঁছে দিচ্ছেন বাড়ি বাড়ি। কোথাও কোথাও আবার নীরবে-নিভৃতে; গুটগুটে অন্ধকার রাতে।

কখনও কখনও আবার টহলের গাড়িতে থাকা ত্রাণ সামগ্রী দারিদ্র্য জর্জর মানুষজনকে সড়কেই দেওয়া হচ্ছে তুলে। দারিদ্র্য জর্জর জীবনে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন নিম্নবিত্ত আর কর্মহীনরা।

আর এসব খরচাপাতি হচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিজস্ব উদ্যোগে; নিজেদের জন্য বরাদ্দকৃত রেশনের টাকায়।

উদ্ভূত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত স্বল্প আয়ের মানুষের পাশে থাকার সরকারি উদ্যোগে নিজেদের সহযাত্রী হিসেবে মানবিক নৈতিকতার মনোভাব নিয়ে পথচলার অঙ্গীকার করেছেন দেশপ্রেমিক অকুতোভয় সেনারা।

নিজেদের জীবন বিপন্ন করে রাত-দিন সড়কে সড়কে টহল দিচ্ছে। দেশপ্রেম, আবেগ ও মানবিকতার সঙ্গে সাধারণ মানুষের জন্য তাদের এমন প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা কেবল নজরকাড়াই নয় মুগ্ধতার শৌর্য-বীর্য আর বীরত্বের বহি:প্রকাশও বটে!

সেনাবাহিনীর মানবিক কর্মকান্ডের প্রশংসা করে প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক তৌহিদ জামান বলেন, করোনার ভয়াল থাবায় কার্যত বিপর্যস্ত বিশ্ব। ইউরোপ থেকে দক্ষিণ এশিয়া সব পথে এখন মৃত্যুর বিভীষিকা।অতীতে কোন মহামারীতে একদিনে এতো মৃত্যু দেখেনি বিশ্ব। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ভয়াবহতায় এক মোহনায় মিলিত হয়েছে দেশ।

আর বরাবরের মতো এবারও দেশের এই  দু:সময়ে ত্রাতার ভূমিকায় আবির্ভূত হয়েছে দক্ষ ও চৌকস সেনারা। বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে একেকজন সেনা সদস্য যেন একেকজন আলোর পথের যাত্রী।

যশোরে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে নিয়োজিত সেনাবাহিনীও তাদের কাজের কৌশলে কিছুটা পরিবর্তন এনেছে। প্রধান সড়কগুলোর পাশাপাশি পাড়া মহল্লাতেও চলছে তাদের টহল।

একই সঙ্গে সড়কের পাশে অপেক্ষারত নিম্ন আয়ের মানুষদের দিচ্ছে ত্রাণ সহযোগিতা। এটি সেনা সদস্যদের নিজেদের ব্যক্তিগত উদ্যোগ।

যশোর শহরে সেনাবাহিনীর টহল টিমের লিডার লেফটেন্যান্ট  কর্নেল নিয়ামুল হালিম খান দৈনিক প্রজন্ম নিউজকে বলেন , করোনা মোকাবেলা করতে গিয়ে যাদের জীবনযাত্রা একদম স্থবির হয়ে গেছে তাদের জন্য আমরা কাজ করছি। অসহায় মানুষজনকে সাধ্যমতো খাবারের সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

যশোর সেনানিবাসের উদ্যোগে জেলার বিভিন্ন স্থানে গত কয়েকদিনে প্রায় এক হাজার পরিবারকে ১০/১২ দিন চলার মত বিভিন্ন রকম খাদ্য সামগ্রী, সাথে সাবান, মাস্ক ও জনসচেতনতা মুলক লিফলেট   বিতরণ করা হয়েছে।

রবিবার (১৯ এপ্রিল) রাতে যশোর ক্যান্টনমেন্টের সিগন্যাল ট্রেনিং সেন্টারের পক্ষ থেকে বেসামরিক কিছু সদস্যকে সহযোগিতার পাশাপাশি দরিদ্র ও দুস্থ মানুষের মাঝে বিভিন্ন প্রকার ত্রাণ সামগ্রী বিতরন করা হয়েছে।

এসময় যশোর সদর উপজেলার নুরপুর গ্রামে ১০০ অসহায় ও নিম্নবিত্ত পরিবারের মাঝে এই ত্রাণ সামগ্রী পৌছে দিয়েছে সেনা সদস্যরা।এই ত্রান হাতে পেয়ে খুশি হয়েছে দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্যরা।

এর আগেও এই গ্রামে আরও ২০০ প্যাকেট ত্রান বিতরণ করা হয় বলে জানাগেছে।

বিতরণকৃত প্রতিটি প্যাকেটে ১০ কেজি চাল, ৫ কেজি আলু, ২ কেজি ডাল, ২ কেজি পেঁয়াজ, ১ কেজি চিনি, ১ কেজি লবণ, ১ কেজি তেল ও দু’টি সাবান রয়েছে।

খুলনা বিভাগের সবকয়টি জেলায় যেমন চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, দর্শনা ও মাগুরা জেলায় করোনায় ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে রাতের বেলায় নীরবে শুকনা খাবার সরবরাহ করেছে সেনা সদস্যরা।

পাশাপাশি যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে ফিরে আসা বাংলাদেশীদের জন্য বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত এবং কুষ্টিয়া ও মাগুরায় করোনা পরিস্থিতির কারনে ফ্রী মেডিকেল ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে সেনাসদস্যদের   তত্ত্বাবধানে বৃদ্ধ ও সহায়সম্বলহীন পরিবারকে নিয়মিতভাবে  চিকিৎসা সহায়তা প্রদান অব্যাহত রয়েছে।

এছাড়া যশোরের প্রান কেন্দ্র দড়াটানায় সেনাবাহিনীর উদ্যোগে    স্থাপন করা হয়েছে “করোনা জীবাণুনাশক বুথ”।

Post Top Ad

Responsive Ads Here