যশোরে বাজার ও দোকানে ভিড় জমিয়ে কেনাকাটার সময় বাড়ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি। করোনার হাত থেকে বাঁচার জন্য যশোরের বেশির ভাগ মানুষ এখন ‘ঘরবন্দি’। রাস্তায় মানুষজনের উপস্থিতিও কমে গেছে। ঘরের বাইরে বের হলে নিরাপদ দূরত্ব মানারও চেষ্টা চলছে। কিন্তু বাজারে গেলেই ঘটছে বিপত্তি। কোনোভাবেই সেখানে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা যাচ্ছে না। আর চলমান অঘোষিত ‘লকডাউন’ পরিস্থিতির মধ্যেও ওষুধসহ প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য কেনার জন্য কমবেশি সবাইকে বাজারে ছুটতে হচ্ছে।
ইতিমধ্যে যশোরের মণিরামপুরে একজনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। ফলে সামাজিক সংক্রমণের মাধ্যমে অতিমাত্রার ছোঁয়াচে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস জেলার অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যশোর শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ঘিঞ্জি পরিবেশের বাজারগুলো ‘করোনার চাষাবাদ’র কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠতে পারে। সেখানে একে অন্যের কাছাকাছি আসা মানুষগুলোর মধ্যে কারো করোনার সংক্রমণ থাকলে অন্যরা সহজেই সংক্রমিত হয়ে পড়বে।
যশোর শহরের বড়বাজার, রেলবাজার, তালতলা, চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড ও চাঁচড়া মোড় বাজারসহ বেশ কয়েকটি ছোটখাট বাজার রয়েছে। এসব বাজারের পরিবেশ অত্যন্ত ঘিঞ্জি। যার জন্য এখানে হাঁটা চলা করাও অনেক কঠিন। চলতে ফিরতে অন্যের সাথে ধাক্কা লাগে। সংকীর্ণ গলিপথের মধ্যে দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করতে হয়। ফলে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনো সুযোগই নেই।
তাই দেশে করোনার সামাজিক সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার মতো এই সংকটময় পরিস্থিতিতে যশোরের বাজারগুলো নতুন করে বিন্যাস করা জরুরি হয়ে উঠেছে। তবে যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ বলেছেন, সামাজিক নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বড়বাজারের ভেতরে মাছের দোকানগুলো বাইরে বের করে আনা হয়েছে। দূরত্ব বজায় রেখে সেখানে বাজার বসছে।
সরেজমিন বড়বাজার ঘুরে জেলা প্রশাসকের বক্তব্যের সাথে সেখানকার পরিস্থিতির অনেকটাই মিল পাওয়া গেছে। মাছের দোকানগুলো রাস্তার পাশ দিয়ে বড়বাজার ছাপিয়ে কাঠেরপুল এলাকা পেরিয়ে অনেক দূর ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে। সম্মিলনী স্কুল, জেলাপ্রাণি সম্পদ অফিস ছাড়িয়েও মাছবাজার বসছে। এখানকার একেকটি মাছের দোকান অন্যটির থেকে বেশ দূরত্ব রেখে বসানো হয়েছে। তবে তরকারির দোকানগুলোর দৃশ্য অন্যরকম। বেশ কাছাকাছিই দোকান বসিয়ে সবজি বিক্রি চলছে। ভিড় জমিয়ে ক্রেতারা সেখান থেকে সবজি কিনছেন।
এদিকে শহরের রেলবাজার ও তালতলা বাজার ঘুরে করোনা পরিস্থিতির আগে যেরকম ছিল এখানকার দৃশ্যও তাই। ঘিঞ্জি পরিবেশে গাÑঘেঁষাঘেঁষি করে পাতানো দোকানে কেনাবেচা চলছে। নিরাপদ কোনো দূরত্ব মানামানির ব্যাপার নেই। আর কেউ চাইলেও সেখানে মানার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। প্রত্যেকটি দোকানই অন্যটির গাÑলাগোয়া। সেটি তরকারির হোক আর মাছ- মাংসেরই হোক। একটি থেকে আরেকটি দোকানের মধ্যে একটুও ফাঁকা জায়গা নেই। ফলে ভিড় জমিয়েই কেনাকাটা চলছে। সেইসাথে চলছে বাজারের গলিপথ দিয়ে অসতর্ক চলাফেরা।