করোনাকালে সাইবার অপরাধ রোধে করণীয় - যশোর নিউজ - Jessore News

Breaking

Post Top Ad


Post Top Ad

Responsive Ads Here

Wednesday, April 29, 2020

করোনাকালে সাইবার অপরাধ রোধে করণীয়

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণে থমকে গেছে গোটা বিশ্ব। কিন্তু থেমে নেই অপরাধজগতের কুশীলবরা। নিত্যনতুন অপরাধের মায়াজালে তাদের অব্যাহত তৎপরতায় সাধারণ মানুষ কখনও হচ্ছে প্রতারিত, কখনও বা শিকার হচ্ছে সাইবার ক্রাইমের।

বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ সেলফ কোয়ারেন্টাইনে থাকলেও থেমে নেই ভার্চুয়াল জগৎ। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকলেও পাঠদান চলছে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম বাড়িতে থেকেই চলমান রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় নথিপত্রের আদান-প্রদান করা হচ্ছে ই-মেইলের মাধ্যমে। অনলাইনভিত্তিক কোম্পানিগুলো তাদের কর্মীদের বাসায় থেকেই কাজ চালিয়ে নিতে বলছে। অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে চলছে জরুরি ব্যাংকিং কার্যক্রম। দৈনন্দিন কেনাকাটা চলছে অনলাইন শপের মাধ্যমে। এই বাস্তবতায় সাইবার অপরাধীদের অন্যতম লক্ষ্যবস্তু এখন ছোট-বড় ই-কমার্স সাইট, অনলাইন ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ই-মেইল অ্যাকাউন্ট ইত্যাদি। বর্তমান পরিস্থিতিতে যখন স্বাস্থ্যসেবা খাত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তখনই সাইবার অপরাধীদের মূল লক্ষ্যবস্তু এই খাতসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। ইন্টারপোল এক বার্তায় জানিয়েছে, স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবার পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার সিস্টেম লক্ষ্য করে ম্যালওয়্যারভিত্তিক আক্রমণ বিশ্বব্যাপী যথেষ্ট মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে।

সাইবার অপরাধীরা ই-মেইলের মাধ্যমে ফাইল অ্যাটাচমেন্ট আকারে অথবা লিঙ্ক প্রেরণের মাধ্যমে ম্যালওয়্যার প্রেরণ করে থাকে। আপনি যখনই এই ই-মেইল খুলে ওই অ্যটাচমেন্ট ফাইল বা লিঙ্কটিতে ক্লিক করবেন, সঙ্গে সঙ্গে ম্যালওয়্যারটি আপনার কম্পিউটার সিস্টেমে ছড়িয়ে পড়বে এবং ক্রমান্বয়ে আপনার কম্পিউটার সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে সাইবার অপরাধীদের হাতে। উদাহরণস্বরূপ বর্তমান প্রেক্ষাপটে আপনি যেহেতু কভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস সংক্রান্ত তথ্য আগ্রহ সহকারে দেখছেন ও পড়ছেন; সাইবার অপরাধীরা এই সাধারণ তথ্যটিকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। মনে করুন, আপনার ইনবক্সে একটি ই-মেইল এলো, যার সাবজেক্ট লাইনে লেখা 'কভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে পিতা-মাতার মৃত্যুতে অসহায় এক শিশুকে সাহায্যের আবেদন'। এমন মর্মস্পর্শী একটি ই-মেইল খোলার পর আপনি দেখলেন যে সেখানে কিছু আবেগঘন বিবরণ দিয়ে শেষে লেখা রয়েছে- 'শিশুটিকে আর্থিক সাহায্য পাঠানোর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর ও অন্যান্য তথ্য জানতে অ্যাটাচমেন্ট ফাইল অথবা লিঙ্কটিতে ক্লিক করুন।' আর এভাবেই আপনার সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে আপনাকে আক্রান্ত করতে তৎপর সাইবার অপরাধীরা।

আপনার ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিতে সাইবার অপরাধীদের আরেকটি মোক্ষম অস্ত্রের নাম 'ফিশিং'। এ ক্ষেত্রে ই-মেইল বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেমন ফেসবুক, ভাইবার, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদির মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয় ফিশিং লিঙ্ক এবং এই লিঙ্কটিতে ক্লিক করতে আপনাকে প্রলুব্ধ করতে এর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় নামিদামি ব্র্যান্ডের কোনো পণ্য ফ্রি বা একটি কিনলে একটি ফ্রি পাওয়ার মতো লোভনীয় অফারের বিবরণ। লিঙ্কটিতে ক্লিক করলে আপনার সামনে ওই নামিদামি ব্র্যান্ডের লোগো সংবলিত এমন একটি ওয়েব পেজ আসবে, যেটা দেখে আপনার ঘুণাক্ষরেও সন্দেহের উদ্রেক হবে না- এটি একটি নকল ওয়েবসাইট। পরবর্তী সময়ে অফারটি পাওয়ার জন্য আপনাকে একটি অনলাইন ফর্ম পূরণ করতে বলা হবে, যেখানে তারা আপনার জন্ম তারিখ, মোবাইল নম্বর, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তথ্য প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য চাইতে থাকবে আর অফারটি পেতে উদগ্রীব আপনিও অবলীলায় তাদের তথ্যগুলো দিয়ে যাবেন। এভাবেই আপনি হয়ে যাবেন সাইবার অপরাধীদের নির্মম শিকার।

দেশে দেশে যখন কোটি কোটি মানুষ সেলফ কোয়ারেন্টাইনে স্বেচ্ছাবন্দি, ঠিক তখনই সাইবার অপরাধীরা এ রকম একটি ফিশিং লিঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, যেখানে তারা লিঙ্কটিতে মানুষকে ক্লিক করতে প্রলুব্ধ করার জন্য বেছে নিয়েছে জনপ্রিয় স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সকে। লিঙ্কটির চটকদার বিবরণে বলা হয়েছে যে, কভিড-১৯ এর সংক্রমণ রোধে সেলফ কোয়ারেন্টাইনে থাকা সবার জন্য নেটফ্লিক্সের প্রিমিয়াম প্যাকেজটি ২ মাসের জন্য ফ্রি। লোভনীয় এই অফারটি পেতে মানুষ কেবল এই লিঙ্ককে ক্লিক করেই ক্ষান্ত থাকেনি বরং নিজের বন্ধু বা সহকর্মীদের কাছেও পাঠিয়ে দিয়েছে লিঙ্কটি। আর এভাবেই করোনাভাইরাসের চেয়েও অনেকটা দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়েছে ফিশিং লিঙ্কটি।

এমন পরিস্থিতিতে করণীয় হচ্ছে- আপনার সব প্রকার আইডি ও অ্যাকাউন্টের জন্য মজবুত পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন এবং কিছুদিন পরপর তা পরিবর্তন করুন। অপরিচিত ই-মেইল অ্যাড্রেস থেকে আসা ই-মেইল খোলা থেকে বিরত থাকুন। আপনার ই-মেইল ও সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের (ফেসবুক, টুইটার) নিরাপত্তা সেটিংস নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও আপডেট করুন। আপনার সব জরুরি ডকুমেন্টের নিয়মিত ব্যাকআপ রাখুন এবং ব্যাকআপ লোকেশনেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। হোম নেটওয়ার্ক বা বাসার ওয়াইফাই সংযোগের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এর পাসওয়ার্ড নিয়মিত পরিবর্তন এবং ইউজার লগ পর্যবেক্ষণ করুন। আপনার ডিভাইসগুলোতে আপডেটেড অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করুন। আপনার পরিবারের সদস্য বিশেষত শিশুদের ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার সম্পর্কে অবহিত করুন।

লকডাউনের এ সময়ে অনলাইনে কেনাকাটার হার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতারণা এড়াতে ও আপনার অর্থ-সম্পদ সুরক্ষার স্বার্থে অনলাইন লেনদেনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করুন। অনলাইনে লেনদেনের সময় ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের নম্বর, পাসওয়ার্ড প্রভৃতি তথ্য প্রদানের আগে ওই অনলাইন শপের ওয়েবসাইটের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ের নিরাপত্তা ফিচার যাচাই করে নিন।

ইন্টারনেট ব্যাংকিং বা অ্যাপসভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অনেক ব্যাংকই গ্রাহককে সর্বশেষ লগইনের তারিখ ও সময় প্রদর্শন করে, যা একজন গ্রাহক তার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে লগইন করলেই দেখতে পান। যারা অনলাইন বা অ্যাপসের মাধ্যমে ব্যাংকিং করেন তাদের উচিত প্রত্যেকবার লগইন করে প্রথমেই সর্বশেষ লগইনের তথ্যটি দেখে নেওয়া। কোনো গরমিল পরিলক্ষিত হলে দ্রুত তা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।

বর্তমানে সাইবার দুনিয়ায় 2 Factor Authentication বা 2FA একটি বহুল ব্যবহৃত নিরাপত্তা ফিচার। আপনার সব অনলাইন পরিষেবার (ই-মেইল, ফেসবুক, অনলাইন ব্যাংকিং ইত্যাদি) জন্য 2FA ফিচারটি চালু করে নিন। এতে আপনার অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা বেড়ে যাবে বহুগুণ।

লকডাউনের এই পরিস্থিতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে একটি সাময়িক পদক্ষেপ। ধৈর্য সহকারে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলুন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। চীনে যেমন এই ভাইরাসের সংক্রমণ কমে এসেছে, তেমনি সারাবিশ্বেই ধীরে ধীরে কমে আসবে এই ভাইরাসের বিস্তৃতি। তাই আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হোন আর সুরক্ষিত থাকুন করোনাভাইরাস থেকে এবং আপনার আশপাশে ওঁৎ পেতে থাকা পেশাদার অপরাধীদের হাত থেকে।

মো. খায়রুল আনাম
সহকারী পুলিশ সুপার, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকা
প্রাক্তন ছাত্র ঃ যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ 

নিউজ সূত্রঃ দৈনিক সমকাল 

Post Top Ad

Responsive Ads Here