যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে দুই রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এছাড়া ভুল চিকিৎসায় এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত নয় দিনে হাসপাতালটিতে এসব ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
এর মধ্যে একটি মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
জেলার চৌগাছা উপজেলার স্বরূপদাহ গ্রামের আনারুল হকের ছেলে আলমগীর কবির। তিনি কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। সেখান থেকে ১০ এপ্রিল দেশে ফেরেন। বেনাপোলে পৌঁছানোর পর করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে পাঠান। সেখানে গত বৃহস্পতিবার ভোরে তার মৃত্যু হয়।
তার স্ত্রী সানজিদা আক্তারের অভিযোগ, তার স্বামী কবিরের অবস্থা বেশ খারাপ বুঝতে পেরে চিকিৎসক উবায়দুল কাদের উজ্জলকে ৫০ বারেরও বেশি কল দিয়েছেন তিনি। কিন্তু চিকিৎসক উবায়দুল কাদের তার কল রিসিভ করেন নি। সানজিদার অভিযোগ তার স্বামী বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন।
এদিকে ভ্যান থেকে পড়ে গিয়ে ডান পায়ে আঘাত পায় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার কাষ্টভাঙ্গার ইয়ার আলীর ছেলে মাহফুজ (৮)। তাকে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিশু সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা তার অস্ত্রোপচার করতে হবে বলে জানান। পরে বুধবার তাকে অস্ত্রোপাচার করার পর তার আর জ্ঞান ফেরেনি।
মাহপুজের মা মরিয়ম বেগমের অভিযোগ, ভুল অস্ত্রোপাচারে তার ছেলের মৃত্যু হয়েছে।
গত ৯ এপ্রিল বুকে ব্যাথা ও শ্বাসকষ্ট হলে এ হাসপাতালে করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয় নড়াইলের নাড়গাতি থানার ওসি রোকসানা খাতুনের স্বামী আহসানুল ইসলামকে। ভর্তির কয়েক ঘণ্টা পরই মারা যান আহসানুল।
তার পরিবারের অভিযোগ, করোনাভাইরাসের অজুহাতে তাকে ভর্তি করানোর পর কোনো চিকিৎসক তাকে চিকিৎসা দিতে আসেন নি। অক্সিজেন দিতে পর্যন্ত আসেন নি ওয়ার্ডে দায়িত্বরত সেবিকা ও কর্মচারিরা। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১২ এপ্রিল তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
কমিটির প্রধান করা হয় কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান জয়ন্ত কুমার পোদ্দারকে। অন্য দুইজন হলেন হাসপাতালের আরএমও আরিফ আহমেদ ও মেডিসিন বিভাগের কনসালটেন্ট মধুসূদন পাল।
এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক দিলীপ কুমার রায় জানান, তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে মাহফুজ কবিরের মৃত্যু সম্পর্কে তিনি জানান, সঠিক সময়ে কিডনি ডায়ালাইসিস দিতে না পারায় আলমগীর কবির মারা গেছেন। বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগটি সঠিক নয়। তিনি আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন তারর চিকিৎসা দিয়েছেন মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক দেবাশীষ দত্ত। চিকিৎসক উবায়দুল কাদেরের দায়িত্ব না থাকায় তিনি ওয়ার্ডে যাননি।
শিশু মাহফুজের মৃত্যুর বিষয়ে তিনি জানান, মাহফুজের মৃত্যুর বিষয়ে জানার জন্য কয়েকজন চিকিৎসককে ডেকেছিলাম। তারা কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছে। ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।