করোনার কারণে যশোরে এ বছর বাংলা নববর্ষ উদযাপন হয়েছে ভিন্ন আঙ্গিকে। দিনটি উদযাপন করতে অনেকে বেছে নিয়েছেন ফেসবুক প্লাটফর্মকে। আবার অনেকে বাড়ির আঙিনায় ছোট পরিসরে সংগঠনের শিশুদের নিয়ে আয়োজন করেছেন সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
নববর্ষের সকালে যশোর থেকে ৩৫ বছর ধরে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের অন্যতম অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। যা ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পেয়েছে। করোনার কারণে মানুষ ঘরবন্দি হওয়ায় এ বছর বন্ধ রয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ সকল প্রকার আনুষ্ঠানিকতা। তবে ঘরে বসেও যে যার মতো উদযাপন করছে দিবসটিকে।
ফেসবুকে নববর্ষের বার্তা প্রদানসহ লাইভ গানের অনুষ্ঠানও করেছে কয়েকটি সংগঠন। যাদের একটি যশোরের ‘পুনশ্চ যশোর’। তারা সকাল ৯টায় ‘এসো হে বৈশাখ’ গানের মধ্যে দিয়ে নববর্ষের অনুষ্ঠানের সূচনা করে। প্রায় একঘণ্টা গান গেয়ে ফেসবুকে মানুষকে বিনোদিত করে তারা।
এছাড়া, শেকড় নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে বাড়ির আঙিনায় সংগঠনের শিশু সদস্যদের নিয়ে আয়োজন করা হয় সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
‘চারুপীঠ’ যশোরের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘সংগঠনের ফেসবুক পেজে ভিডিও বার্তা প্রদানের মাধ্যমে এ বছর নববর্ষ উদযাপন করেছি। ১৯৮৫ সালে চারুপীঠ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়। টানা ৩৫ বছর ধরে পহেলা বৈশাখে যশোরসহ সারাদেশে মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়। কিন্তু করোনার কারণে মানুষ ঘরবন্দি হওয়ায় এ বছর মঙ্গল শোভাযাত্রা হচ্ছে না। তবে আশা করি, করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হবো এবং আগামী নববর্ষ সাড়ম্বরে উদযাপন করবো।’
ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে ঘরে আয়োজিত অনুষ্ঠান দেখানো হয়পুনশ্চ যশোরের উপদেষ্টা সুকুমার দাস বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে ঘরেই নববর্ষ উদযাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনজন শিল্পী ও দুজন বাদ্যযন্ত্রীকে নিয়ে ঘরে বসে সংগীত পরিবেশন করা হয়েছে। যা ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে সংগঠনের কর্মী ও যশোরের সংস্কৃতিমনাদের দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রায় এক ঘণ্টা এ অনুষ্ঠান চালানো হয়। পরে লুচি, তরকারি ও মিষ্টিমুখের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানা হয়।’
‘শেকড়’ যশোরের সভাপতি রওশন আরা রাসু বলেন, ‘প্রতিবছরই বড় আয়োজন থাকে। তবে এবার করোনার কারণে কোনও আয়োজন করা হয়নি। সংগঠনের ক্ষুদে সদস্যদের আকাঙ্ক্ষার কারণে আমার বাড়ির আঙিনায় ছোট পরিসরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মিষ্টিমুখের আয়োজন করি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই এ অনুষ্ঠান করা হয়। দেড় ঘণ্টাব্যাপী এ অনুষ্ঠানে গান ও নাচ পরিবেশন করে সংগঠনের সদস্যরা।’
যশোর জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলু বলেন, ‘অদৃশ্য শত্রুর সাথে সারাবিশ্ব যুদ্ধ করছে। পরিবর্তিত এ পরিস্থিতিতে যশোরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন অনলাইন এবং ঘরোয়া পরিবেশে নববর্ষ উদযাপন করছে। আমার সংগঠন বিবর্তন যশোরও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আড্ডা ও কবিতা, গান-বাজনা করছে। আশা করি, করোনার বিরুদ্ধে মানবতার জয় হবে এবং আগামী নববর্ষ সাড়ম্বরে উদযাপন করা যাবে।’