সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও ঘরে থাকার নির্দেশনা উপেক্ষিত হচ্ছে যশোরে। ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাটহল ও সচেতনতামূলক প্রচারণাও কোনো কাজে আসছে না। তবে আইনশৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিত ম্যাজিস্ট্রেটরা বলছেন, বৃহস্পতিবার শেষবারের মতো সর্তক করা হচ্ছে। না মানলে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এদিকে বিভিন্ন এলাকার মসজিদে মসজিদে ঘরে থাকার জন্য প্রচারণাও চালানো হয়েছে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। একইসাথে জনগণকে ঘরে থাকার পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনে বের হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলের নির্দেশনা জারি করে। কিন্তু শুরু থেকেই সাধারণ মানুষ সরকারের সিদ্ধান্ত খুব একটা মানছিলেন না। যে কারণে গতকাল সরকারের বিভিন্ন সংস্থা কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দেয়।
কিন্তু তার প্রভাব নেই যশোরে। সকাল থেকেই শহরের সড়কগুলোতে মানুষ ও যানবাহন ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। যা সাধারণ ছুটি ঘোষণার আগের চিত্রের মত। বাজারগুলোতেও ছিল উপচে পড়া ভিড়।
কেন বের হয়েছেন জানতে চাইলে জনগণ নানা অজুহাত দেখাচ্ছেন।
সাইদ হোসেন নামে একজন বলেন, এক সপ্তাহ পর শহর দেখতে বের হলাম। সবাইতো বের হচ্ছে। শহরের চিত্র দেখে বোঝা যাচ্ছে না যে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শহরে কোথাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বাধার সম্মুখীনও হইনি।
আব্দুস সালাম নামে অপর একজন বলেন, একটু মরিচ কিনতে বের হয়েছি। আর গ্যারেজটার কী অবস্থা দেখে এখনই চলে যাব।
শারমিন নাহার নামে এক ইজিবাইক যাত্রী বলেন, ঘরেই তো ছিলাম। টাকা উঠাতে ব্যাংকে যাচ্ছি। টাকা না উঠালে খাব কী?
রাশেদ ইসলাম নামে অপর এক ইজিবাইকের যাত্রী বলেন, দোকান এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ। দোকানের চারপাশে ঝোপঝাড় জমে গেছে, কাটতে যাচ্ছি।
করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনই ফিরে যাচ্ছি।
এদিকে নূর ইমাম বাবুল নামে এক সংবাদকর্মী বলেন, সংবাদ সংগ্রহের জন্য সকাল থেকে মাঠে আছি। শহরের যা দেখেছি তা ২৬ মার্চের আগের চিত্রের মতো মনে হলো। সবাই ঘরের বাইরে, কারণে-অকারণে। কেউ কারো কথা শুনছেন না। শহরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়াকড়িও চোখে পড়েনি। এভাবে চললে সরকার যে লক্ষ্যে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে তা বাস্তবায়ন হওয়া সম্ভব নয়।
অবশ্য জনগণকে ঘরে ফেরাতে শহরের কোথাও কোথাও ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে সেনা ও পুলিশ টহল দেখা গেছে। তারা প্রচারণার মাধ্যমে মানুষকে ঘরে ফিরতে আহবান জানাচ্ছেন। ফুটপাতের খোলা দোকানগুলোও বন্ধ করতে দেখা যায়।
যশোর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মাদ এনামুল হক বলেন, আমরা বের হওয়ার পর থেকে মানুষকে ঘরে ফিরতে আহবান জানাচ্ছি। আজ সর্বশেষ সর্তকতা করা হচ্ছে। না মানলে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
যশোর জেলায় কর্মরত সেনা টিমের কমান্ডার লে. কর্নেল নেয়ামুল জানান, সকাল থেকে যশোর শহরসহ সব উপজেলায় সেনা টহল অব্যাহত রয়েছে। মানুষ ঘরে থাকার নির্দেশনা না মানলে কঠোর হতে বলা হয়েছে।
এদিকে বিভিন্ন এলাকার মসজিদ থেকে ঘরে থাকার জন্য প্রচারণাও চালানো হয়েছে।
যশোর শহরের শংকরপুর গোলপাতা জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা দেলোয়ার হোসেন জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘরে থাকার নির্দেশনা না মানলে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে প্রচার করতে বলা হয়েছে। সে মোতাবেক আজ সকালে মসজিদের মাইকে প্রচারণা চালানো হয়েছে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া যাতে কেউ ঘরের বাইরে না বের হয় তার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। একইসাথে মহল্লার মুদি ও ওষুধের দোকান বাদে সকল দোকান বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। সেইসাথে মুদি দোকানগুলোর সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে।