যশোরে অবৈধ বাস- ট্রাক প্রায় ৫০০০, লাইসেন্স নেই ৪০০০ চালকের - যশোর নিউজ - Jessore News

Breaking

Post Top Ad


Post Top Ad

Responsive Ads Here

Wednesday, December 4, 2019

যশোরে অবৈধ বাস- ট্রাক প্রায় ৫০০০, লাইসেন্স নেই ৪০০০ চালকের


ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা সত্ত্বেও যশোরে ভারী ও মাঝারি ধরনের যানবাহন চালাচ্ছেন চার হাজারেরও বেশি চালক। একই সঙ্গে জেলায় অবৈধভাবে চলছে ফিটনেসবিহীন প্রায় পাঁচ হাজার বাস ও ট্রাক। ফলে যশোরে সড়ক দুর্ঘটনা পরিণত হয়েছে প্রায় নিত্যদিনের ঘটনায়। গত প্রায় চার বছরে যশোরের চারটি জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে অন্তত ৫৪টি দুর্ঘটনায় ৫৭ জন প্রাণ হারিয়েছে। আর এতে গুরুতর আহতের সংখ্যা অগণিত।

বাংলাদেশ সড়ক ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) যশোর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ জেলায় বিভিন্ন সড়কে নিবন্ধিত ভারী ও মাঝারি (বাস-মিনিবাস, ট্রাক-ট্রাক্টর-ট্যাংকলরি) ধরনের যানবাহন চলাচল করে ১৩ হাজার ১৩১টি। এর মধ্যে রুট পারমিট বা চলাচলের বৈধতা রয়েছে ৮ হাজার ৩০৭টির। অন্যদিকে রুট পারমিট নেই ৪ হাজার ৮২৪টি গাড়ির। রুট পারমিটবিহীন এসব গাড়ি সড়ক-মহাসড়কে নামানো হয়েছে জোড়াতালি দিয়ে। এদিকে জেলায় ১৩ হাজার ১৩১ জন পেশাদার চালকের মধ্যে ৮ হাজার ৮২৩ জনের ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে। লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালাচ্ছেন ৪ হাজার ৩০৮ জন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ও লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালকের কারণে জেলায় লাগামহীনভাবে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। যশোর হাইওয়ে পুলিশের চারটি থানা ও ফাঁড়ি সূত্রে জানা গেছে, গত তিন বছরে যশোর-খুলনা, যশোর-বেনাপোল, যশোর-ঝিনাইদহ ও যশোর-নড়াইল আঞ্চলিক ও জাতীয় মহাসড়কে ৫৪টি দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে যশোর-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়কে ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৬টি দুর্ঘটনায় ৩৫ জন মারা যায়। যশোর-খুলনা জাতীয় মহাসড়কে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১৪টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় ১৮ জন। যশোর-ঝিনাইদহ জাতীয় মহাসড়কের পালবাড়ী মোড় থেকে সাতমাইল হৈবতপুর পর্যন্ত ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনটি দুর্ঘটনায় তিনজন মারা গেছেন। এছাড়া যশোর-নড়াইল আঞ্চলিক মহাসড়কে একটি দুর্ঘটনায় একজন মারা যায়।

বারোবাজার হাইওয়ে থানার পুলিশ পরিদর্শক শেখ মাহফুজার রহমান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য গাড়িচালকের দায় রয়েছে। বেপরোয়া গতি ও দীর্ঘ সময় ধরে গাড়ি চালানোর কারণে তাদের মনোযোগ নষ্ট হয়। এতে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। তাছাড়া ত্রুটিপূর্ণ যানবহনও দুর্ঘটনার প্রধান একটি কারণ।

সম্প্রতি যশোর ও নড়াইল বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, যশোর-নড়াইল ও যশোর-কেশবপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে চলাচল করা বেশির ভাগ বাসের ফিটনেস নেই।

বিআরটিএ যশোর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৩ হাজার ২০২টি বাস-মিনিবাস চলাচল করছে। এর মধ্যে ২৮০টি বাসের চলাচলের বৈধতা (রুট পারমিট) নেই। এ বিষয়ে যশোর জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আলী আকবর বলেন, যেসব গাড়ির ফিটনেস নেই, সেসব বাসের মালিকদের বারবার নোটিস দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা রুট পারমিট নবায়ন করছেন না।

তিনি বলেন, বাস্তবতা হলো, অনেক মালিকই ১০-১৫ বছর ধরে গাড়ির ফিটনেস লাইসেন্স নবায়ন করেননি। এ অবস্থায় জরিমানার পরিমাণ অনেক জমে গেছে। ফলে তারা ফিটনেস লাইসেন্স নিতে আগ্রহী হচ্ছেন না।

বিআরটিএ সূত্রে আরো জানা গেছে, বাসের পাশাপাশি যশোরে ৯ হাজার ৯৫৮টি ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ট্যাংকলরি ও টিপার (মাটি টানা গাড়ি) চলাচল করে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৫৪৪টি গাড়ির চলাচলের বৈধতা নেই।

যশোর শহরের খাজুরা ট্রাক স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তার দুই পাশে রাখা অধিকাংশ ট্রাকের কাঠামো তুলনামূলক লম্বা। কয়েকটি ট্রাকে কাঠামোর দুই পাশে অতিরিক্ত লোহার অ্যাঙ্গেল লাগানো আছে। এসব ট্রাকের ইঞ্জিনের অবস্থাও খারাপ।

জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও যশোর পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার বলেন, ট্রাকের কাঠামো সর্বোচ্চ ১৫ ফুট লম্বা হওয়ার কথা। তবে কোনো ট্রাকের মালিক যদি তা ১৬ ফুট করেন, তাহলে ফিটনেস সনদ পাবেন না। এসব ট্রাকের দায় সমিতি নেবে না।

এদিকে ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকার বিষয়ে যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোর্তজা হোসেন বলেন, আমরা সবাই ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে চাই। কিন্তু লাইসেন্স পেতে অনেক জটিলতা রয়েছে। লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে পরীক্ষা দিয়ে কার্ড হাতে পেতে এক বছরের বেশি সময় লেগে যায়।

সার্বিক বিষয়ে বিআরটিএ যশোরের সহকারী পরিচালক কাজী মো. মুরসালিন বলেন, রুট পারমিট পাওয়ার শর্ত হলো, গাড়ির ফিটনেস সঠিক থাকতে হবে। কিন্তু যশোরে বহু বাস-ট্রাকের এ ফিটনেস নেই। তাছাড়া অনেকেই রুট পারমিটের জরিমানা মওকুফের আশায় বসে আছেন। এদিকে অভিযান পরিচালনা করলেই গাড়ির মালিক ও শ্রমিকরা ধর্মঘট শুরু করেন। জনগণের ভোগান্তির কথা ভেবে আমরাও তেমন কিছু করতে পারি না।

অন্যদিকে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, প্লাস্টিকের স্মার্ট কার্ড বিদেশ থেকে আসে। ছয় মাস ধরে এ কার্ড আমদানি বন্ধ রয়েছে। এ কারণে বিদেশে যাওয়ার মতো জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে স্মার্ট কার্ড দেয়া হচ্ছে না। তবে ড্রাইভিং লাইসেন্স হিসেবে চালকদের স্লিপ দেয়া হচ্ছে। ওই স্লিপ নিয়ে গাড়ি চালালে জরিমানা করা হবে না।

Post Top Ad

Responsive Ads Here