একই পরিবারের সাত সদস্য প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী চার সন্তান ও দুই নাতি আর প্যারালাইজড আক্রান্ত স্বামীকে নিয়ে অভাবের সংসারে অথৈ সাগরে ভাসছেন সরলা বালা।
তার দাবি, চিকিৎসকের ভুলে তার তিন সন্তান প্রতিবন্ধী হয়েছে। সমাজসেবা অধিদফতর থেকে তাদের প্রতিবন্ধী পরিচয়পত্রও দেয়া হয়েছে।
যশোরের চৌগাছা পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ঋষিপাড়ার বাসিন্দা নিরঞ্জনের স্ত্রী সরলা বালা।
তার প্রতিবন্ধী চার সন্তানের মধ্যে বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে মোহন (১৯), যমজ মিলন ও নয়ন (১৫), মেয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী অম্বালিকা (৩৫) এবং সেঝ মেয়ের দুই ছেলে বুদ্ধি-শারীরিক প্রতিবন্ধী বিদ্যুৎ (১৪) ও বিধান (১২)।
এদের মধ্যে তিন ছেলের জন্ম হয়েছে সরকারি হাসপাতালে লাইগেশন (জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি) গ্রহণের পর। ঋষি সম্প্রদায়ের এই পরিবারের আয়ের উৎস ছাগলের প্রজনন করিয়ে অর্জিত টাকা। পরিবারের দুই সদস্য ভাতা পেলেও সেটি অপ্রতুল।
জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মুনা আফরিন বলেন, একই পরিবারের প্রতিবন্ধী সাত সদস্যের পাশে দাঁড়ানো উচিত। সরকারিভাবেই উপকরণ ও আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি পুনর্বাসনের সুযোগ আছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সহায়তার ব্যবস্থা করা করা হবে।
সরলা দেবী বলেন, বিয়ের পর আমার পরিবার-পরিকল্পনার বিষয়ে কোনো ধারণা ছিল না। আমার স্বামীও এ সব নিয়ে ভাবতেন না। এভাবেই আমার একে একে সাত সন্তান জন্ম নেয়। এর মধ্যে একটি সন্তান শিশু বেলায় মারা যায়।
এরপর চৌগাছা সরকারি হাসপাতালের লোকেরা আমার বাড়িতে আসেন। সে সময় হাসপাতালের চিকিৎসকদের আশ্বাসে ১৯৯৮ সালের শেষ দিকে কি ৯৯ সালের শুরুতে চৌগাছা হাসপাতালে আমার পেট কেটে লাইগেশন (অপারেশন) করা হয়।
কিন্তু তার পরও '৯৯ সালে আমার পেটে সন্তান আসে। আমি হাসপাতালে গেলে তারা বলেন সন্তান আসেনি। তোমার পেটে কিছু হয়েছে। ২০০০ সালের জুন মাসে (জুনের ৫ তারিখ) আমার ছেলে মোহনের (বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী) জন্ম হয়।
এরপর আমি আবারও হাসপাতালে গেলে আমাকে আবারও অপারেশন (দিন তারিখ মনে করতে পারছিলেন না) করা হয়। এরপর আমি আবারও গর্ভবতী হয়ে পড়ি। এবার আমার যমজ সন্তান পেটে আসে। সন্তান পেটে আসলে আমি আবারও হাসপাতালে যাই। তখনও ডাক্তাররা বলে তোমার পেটে কোনো সন্তান নেই। আমি বলি যমজ সন্তান আছে।
এ নিয়ে ডাক্তারদের সঙ্গে আমার কথাকাটাকাটি হয়। তারা জোর দিয়ে বলে তোমার পেটে সন্তান নেই। আর আমি বলি আছে। যমজ সন্তান আছে। এরপর তারা আমাকে যশোরে পাঠায় পরীক্ষা করতে। এরপর আমার কি যেন পরীক্ষা করা হয়। ডাক্তাররা নিজেরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করেন। পরে আমাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
২০০৪ সালে (১ জানুয়ারি) আমার যমজ ছেলে মিলন ও নয়নের (বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী) জন্ম হয়। ওদের জন্মের পর আমাকে হাসপাতালে ডেকে নিয়ে কিছু টাকা দেয়া হয়। বলা হয় এ নিয়ে তুমি কোনো ঝামেলা কর না।
স্থানীয় কাউন্সিলর আতিয়ার রহমান বলেন, ওই পরিবারের বড় মেয়ে ও তার পিতাকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড অপ্রতুল হওয়ায় তাদের সবার ভাতা দেয়া যায় না। শতভাগ প্রতিবন্ধীদের ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা হলেই কেবল সবাইকে ভাতার আওতায় আনা যেত।
চৌগাছা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নির্মল কান্তি কর্মকার বলেন, বর্তমানে কোনো পরিবারে শতভাগ প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা নেই। ২০১৬ সালে একটি এনজিওর মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের পরিচয়পত্র দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর একটি প্রতিশ্রুতি আছে, দেশের শতভাগ প্রতিবন্ধীদের ভাতার আওতায় আনা হবে। সেটি হলেই কেবল ওই পরিবারের সবাইকে ভাতা দেয়া সম্ভব হবে।