যশোরে অভিযান চালিয়ে প্রতিদিনই ইয়াবা, ফেনসিডিল ও গাঁজা জব্দ করছে পুলিশ। শহর থেকে গ্রাম পর্যায়েও ইয়াবা ছড়িয়ে পড়েছে। ইয়াবার কারণে গ্রামের চিরচেনা দৃশ্যপট বদলে যাচ্ছে। শহর-গ্রামে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যদিকে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ‘হিমশিম’ খেতে হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন যানবাহনে যশোরে ইয়াবার চালান আসছে। অন্যদিকে বেনাপোলের আশপাশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা ও ফেনসিডিলের চালান ঢুকছে। প্রায় প্রতিদিন পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যশোরের শহর-গ্রাম থেকে ইয়াবা, ফেনসিডিল ও গাঁজা জব্দ করছে। মাদক কারবারিরা অভিনব কৌশলে মাদক বিকিকিনির কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে আদালত ও পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু এর পরও মাদকের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষার্থীসহ গ্রামের নানা পেশাজীবী মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এর ফলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।
গত ২৩ নভেম্বর শহরের শংকরপুর এলাকায় সেবনে বাধা দেওয়ায় মাদক কারবারিদের হামলায় রাবেয়া বেগম (৬০) ও তাঁর মেয়ে মৌসুমী আক্তার (৩২) আহত হন। মাদক কারবারিরা এঁদের বাড়িতে বোমা হামলাও চালিয়েছে বলে জানা গেছে। আহত রাবেয়া বেগম বলেন, ‘এলাকার বাঁধন ও জিতু নামের দুই মাদক কারবারি এ হামলার সঙ্গে যুক্ত।’
একই দিন চুড়ামনকাটির দাসপাড়ায় মাদক নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষে ৯ জন আহত হয়েছে। গত ২৫ নভেম্বর মাদক নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে শহরের রেল রোড এলাকায় ধাওয়াধাওয়ির মতোও ঘটনা ঘটেছে।
জানা যায়, বেশির ভাগ যুবকই মাদক-ফেনসিডিল সেবন করে। কোনো কোনো এলাকায় কিশোররাও মাদক সেবন করছে। এদের মধ্যে ছাত্র, শ্রমিক, ইজি বাইকচালকসহ বেকাররাও রয়েছে।
খবর নিয়ে আরো জানা যায়, অভয়নগর উপজেলার আটটি ইউনিয়নেই ইয়াবার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এ ছাড়া পৌর এলাকার রাজঘাট, চেঙ্গুটিয়া, শংকরপাশা, খেয়ারঘাট এলাকায় মাদক কেনাবেচা হয়। শার্শা উপজেলার বেনাপোল পোর্ট থানাধীন ভবের বেড়, কাগজ পুকুর, সাদীপুর, বাহাদুরপুর ছাড়াও আরো কয়েকটি সীমান্তবর্তী গ্রামে ফেনসিডিল ও ইয়াবার কারবার রয়েছে। ভবের বেড় গ্রামের একজন মোটর শ্রমিক বলেন, ‘আমরা মুরগি পুষতে পারি না। ঘরের বাইরে জুতা-স্যান্ডেল রাখতে পারি না। মাদকসেবীরা এসব চুরি করে নিয়ে যায়।’
আদালতের একটি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিচারাধীন মামলার মধ্যে মাদক মামলাই বেশি। মাদক মামলার জন্য মামলাজট বাড়ছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গি নির্মূল করাই আমাদের প্রধান কাজ। অভিযান চালিয়ে প্রতিদিনই মাদকদ্রব্য জব্দের পাশাপাশি কারবারিদের আটক করা হচ্ছে।’
নাভারণ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান বলেন, ‘সীমান্তবর্তী বেনাপোল পোর্ট থানায় মাদকের মামলাই সবচেয়ে বেশি হয়। সীমান্তবর্তী জেলার কারণে অনেক আগে থেকেই যশোরে মাদকের বিস্তার ছিল। বর্তমানে আমরা মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালিয়ে মাদককে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি।’
পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, ‘যশোর পুলিশের সব ইউনিট মাদক নির্মূলে কাজ করছে। আগের চেয়ে মাদকের বিস্তার কমেছে।’