চলছে হেমন্তকাল। শীতকাল আসতে এখনো এক মাস বাকি। তবে এখনই ভোরের দিকে শীত শীত অনুভূত হচ্ছে। শীত আসার আগেই প্রতিবারের মতো যশোরের বিভিন্ন মোড়ে ভাপা পিঠার দোকান বসেছে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব দোকানে ভিড় লেগে থাকতে দেখা যায়। চুলার গনগনে আগুনের পাশে বসে পিঠা খাওয়ার মজা নিচ্ছে শহরের নাগরিকরা।
পিঠা বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। অতিথি আপ্যায়ন ও বিভিন্ন পার্বণে গ্রামে পিঠার কদর আগের মতোই রয়েছে। যদিও শহুরে জীবনে এর প্রচলন ততোটা দেখা মেলে না। তবে শীত আসলে শহরের মোড়ে মোড়ে দেখা মেলে পিঠার দোকান। এতে যেমন কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হয় তেমনি পিঠার স্বাদ নিতে পারেন শহরবাসী।
এমন কথাই বলছিলেন শহরের মুজিব সড়কে সার্কিট হাউজের সামনে বসে পিঠা বিক্রেতা আজগর আলি (৬২)। তিনি বলেন, শীত আসতে শুরু করলেই পিঠা বানাই। অন্য সময় ভ্যান চালাই। বিভিন্ন মেলায় পাপর বিক্রি করি। পিঠা বিক্রি করে নিজের আয় হয়। আবার শহরবাসীকে পিঠার স্বাদ দিতে পারি।
তিনি আরও বলেন, নিজেই গুঁড়া তৈরি থেকে শুরু করে নারকেল কোড়ানো; পাটালি কেটে ছোট পিস করা গুঁড়োকে পানি দিয়ে মিশিয়ে পিঠা বানানোর উপযোগী করেন। যে আয় হয় তা দিয়েই সংসার খরচ চালান।
শহরের এমএম আলী রোডে কালেক্টরেট স্কুল মোড়ে পিঠা তৈরি করে বিক্রি করেন পোস্ট অফিস পাড়ার ৩৩ বছর বয়সী মর্জিনা। তাকে ছেড়ে স্বামী চলে গেছে অনেক বছর আগে। তিনি বলেন, প্রতিবছর পিঠা বানাই। পিঠা বানিয়ে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা আয় হয়। দিনের বেলা অফিসে আয়ার কাজ করেন। ভাপা পিঠা ছাড়াও চিতই, পুলি পিঠা, পাকান পিঠা বানান তিনি। নিজের আয়ে এক মেয়েকে এসএসসি পর্যন্ত পড়িয়ে বিয়ে দিয়েছেন।
পিঠা বানাতে কেমন লাগে জানতে চাইলে বলেন, আমি লেখাপড়া করতে পারিনি, মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়েছি। স্বামী চলে যাওয়ার পর ভেঙে পড়িনি। অফিসে অফিসে কাজ করেছি। প্রতিবার শীত এলেই পিঠা বানাই। এভাবে ভালোই চলছে আমার। কোনো আফসোস নেই। তার বানানো পিঠা কিনতে এসেছিলেন শিক্ষার্থী বর্ষা। জানতে চাইলে তিনি বলেন, পড়াশোনার কারণে বাড়ি যাওয়া হয় কম। তাই মায়ের হাতে বানানো পিঠার স্বাদ কমই পাওয়া যায়। রাস্তার পাশে বসা এরকম পিঠার ছোট দোকানগুলো সেই স্বাদ পূরণ করে।