যশোরে লালদীঘি ভরাট করে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ কাজ চলছে, প্রকৃতির ব্যাপক ক্ষতির আশংকা - যশোর নিউজ - Jessore News

Breaking

Post Top Ad


Post Top Ad

Responsive Ads Here

Saturday, November 9, 2019

যশোরে লালদীঘি ভরাট করে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ কাজ চলছে, প্রকৃতির ব্যাপক ক্ষতির আশংকা


যশোর পৌর কর্তৃপক্ষ শহরের প্রাণকেন্দ্রের ঐতিহ্যবাহী লালদীঘি ভরাট করে ১০ তলাবিশিষ্ট শপিং কমপ্লেক্স নির্মাণ করছে। জলাশয় সংরক্ষণ আইনে বলা আছে, সরকার ঘোষিত কোন জলাশয় কোনভাবেই ভরাট করা যাবে না। কিন্তু এই আইনের তোয়াক্কা না করে খোদ পৌরসভার পক্ষ থেকে রাতের আধারে পুকুর ভরাটের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে পাইপ লাগিয়ে রাতের বেলায় পুকুরের পানি সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। গত কয়েক বছরে যশোর পৌর শহরের অন্তত ১০টি পুকুর ভরাট করে আবাসন ও বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে।

যেনতেনভাবে পুকুর ভরাট হলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। যে কারণে যশোরে জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। গরমের সময় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ও শীতের সময় সর্বনিন্ম তাপমাত্রা যশোরে বিরাজ করছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শহরের ঐহিত্যবাহী লালদীঘির পাড়ে ‘পৌর হেরিটেজ মার্কেট’ শিরোনামে ১০তলা বিশিষ্ট শপিং কমপ্লেক্সের ছবিসহ একটি সাইন বোর্ড লাগানো রয়েছে। সেখানে লেখা আছে, নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন যশোর পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার। মার্কেট নির্মাণের জন্যে নির্মাণ কাজের পাশে স্কেভেটর ও পাইলিং করার জন্যে বিশাল যন্ত্র রাখা আছে।

বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে দীঘির ভিতরে অন্তত ২০ ফুটের মত। দুইটি সেচযন্ত্র বসিয়ে দীঘির পানি সেচে রাস্তার উপর দিয়ে বের করে দেওয়া হচ্ছে। এতে রাস্তাও নষ্ট হচ্ছে। নির্মাণ কাজের পাশের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এক মাস ধরে মার্কেট নির্মাণের জন্যে পাইলিং এর কাজ চলছে। সপ্তাহ খানেক ধরে ট্রাকে করে বালু ফেলে পাড় ভরাটের কাজ চলছে। দুইটি স্যালোমেশিন বসিয়ে দীঘির পানি সেচে ফেলা হচ্ছে।’ লালদীঘি বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সদস্য ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান বলেন, ‘শহরবাসির সামনে পৌর কর্তৃপক্ষ যশোরের স্পন্দন ঐতিহ্যবাহী লালদীঘি ভরাট করে বহুতল মার্কেট নির্মাণ করছে অথচ আমরা কিছুই করতে পারছি না।

পৌরসভা যশোরের পরিবেশ ও মানুষের স্বস্থির কথা না ভেবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণে বেশি আগ্রহী। এতে শহরের পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে লালদীঘির চার ভাগের এক ভাগ ভরাট করা হয়েছে। জলাধর সংরক্ষণ আইন পৌরসভা মানছে না। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনও নিরব ভূমিকায় রয়েছে। যা আমাদের জন্যে চরম হতাশার বিষয়।’

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, লালদীঘি আর যশোর পৌরসভার অভিন্ন ইতিহাস; অভিন্ন সত্তা। অন্তত ১৫০ বছর আগে যশোর শহরের গাড়িখানা সড়কের পাশে পৌরসভার উদ্যোগে এক একর ১২ শতাংশ জমির ওপর লালদীঘি খনন করা হয়। এলাকার শত শত মানুষ প্রতিদিন দীঘিতে গোসল, কাপড় কাচাসহ বিভিন্ন কাজে দীঘির পানি ব্যবহার করছেন। যশোরের পরিচয়চিহ্ন এই লালদীঘি।

যশোর ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ারে এই দীঘির বর্ণনা রয়েছে। নাগরিকদের পানি সরবরাহের জন্য এই পুকুর খনন করা হয়েছিল। কয়েক বছর আগেও এই লালদীঘি ভরাট করে পৌর কর্তৃপক্ষের মার্কেট নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছিলো। ওই সিদ্ধান্ত বাতিল ও দীঘিটি পুনঃখননের দাবিতে জনমত গঠনের লক্ষ্যে পৌরসভার বাসিন্দারা শহরের মোড়ে মোড়ে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান চালান।

সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচিও হয়েছে একাধিকবার। যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সোলজার রহমান বলেন, ‘শিল্প কারখানা ও মানুষের চাপে শহরের বাতাস দূষিত হয়। ওই দূষিত বাতাস শোধন করার জন্যে শহরের ভিতরে উন্মুক্ত জলাধার ও ফাঁকা জায়গা রাখতে হয়। ওই বাতাস জলাধার ও ফাঁকা জায়গার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার সময় শুদ্ধ হয়। যে বাতাস মানুষের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে। এছাড়া যে শহরে পর্যাপ্ত জলাশয় থাকে সেই শহর শীতল থাকে। এতে পরিবেশও ঠিক থাকে। এজন্য যশোরের প্রাণকেন্দ্রে লালদীঘি উন্মক্ত ও পরিচ্ছন্ন রাখা অত্যন্ত জরুরি।’

যশোর পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার বলেন, ‘লালদীঘির পাড়ে ৩৫ শতক জমির উপরে ১০তলা বিশিষ্ট হেরিটেজ মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে। ওই মার্কেটের পাইলিংয়ের জন্যে পাড়ের কিছু অংশে বালু ফেলা হয়েছে। নির্মাণ শেষে যন্ত্র নিয়ে ওই বালু আবার তুলে ফেলা হবে। লালদীঘি ভরাট করা হবে না। মার্কেট নির্মাণের প্রয়োজনে আপাতত বালু ফেলা হচ্ছে।’ শহরের ব্যক্তিমালিকানাধীন অধিকাংশ পুকুর ভরাট করে ফেলা হয়েছে। শহরের ছিন্নমূল মানুষের গোসলের জায়গা কমে যাচ্ছে। শহরের কোথাও আগুন লাগলে দমকল বাহিনী তা নেভানোর জন্য পানি খুঁজে পাবে না।

গত দুই বছরে শহরের অন্তত ১০টি পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। যে কারণে বর্ষা মৌসুমে গোটা শহর জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। যশোর শহরের প্রাণের স্পন্দন ঐতিহ্যবাহি লালদিঘি। শহরের ইট, কাঠ, বালু, পাথরের ঝনঝনানি থেকে একটু শান্তির স্থল এই লালদীঘির পাড়। লালদিঘি ভরাটের ফলে যশোর হারাচ্ছে তার পুরানো ঐতিহ্য। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক নাজমুল হুদা বলেন, ‘জলাশয় সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী সরকার স্বীকৃত কোন জলাশয় কোনভাবেই ভরাট করা যাবে না।

অনেকক্ষেত্রে এই আইন মানা হচ্ছে না। এই আইন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হয়। লালদীঘি ভরাটের বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ যশোরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক নূর-ই আলম জানান, লালদীঘি ভরাট করতে পারেনা পৌরসভা। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Post Top Ad

Responsive Ads Here