এক প্রশিক্ষণে পাল্টে গেছে যশোরের সিমলার জীবনমান - যশোর নিউজ - Jessore News

Breaking

Post Top Ad


Post Top Ad

Responsive Ads Here

Wednesday, November 20, 2019

এক প্রশিক্ষণে পাল্টে গেছে যশোরের সিমলার জীবনমান

এক প্রশিক্ষণে পাল্টে গেছে জান্নাতুল ফেরদৌস সিমলার জীবনমান। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে এখন তিনি হাতের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। মা আর মেয়ের সংসারের হাল ধরেছেন সিমলা। এখন প্রতি মাসে হাতের কাজ করে সিমলা ৪-৫ হাজার টাকা আয় করছেন। যা দিয়ে তাদের সংসার কোনো রকমে চলে যাচ্ছে। আনন্দের বিষয় হচ্ছে, তাকে হাত পাততে হচ্ছে না কারোর কাছে। প্রতিবেশীদের কাছে বেড়েছে তার আত্মমর্যাদা। সিমলার ইচ্ছে তার এই ক্ষুদ্র ব্যবসাকে দিনে দিনে বড় করে তোলা। এর জন্য তার নগদ অর্থের প্রয়োজন। ইতিমধ্যে নগদ অর্থের জন্য তিনি একটি বেসরকারি আর্থিক সংস্থার সাথে যোগাযোগও করেছেন। কিন্তু অভিভাবকহীন হওয়ার কারণে ওই এনজিও ঋণ দিতে গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ সিমলার।
যে প্রশিক্ষণ তার জীবনমান পরিবর্তন করেছে সে প্রশিক্ষণ সিমলা পেয়েছেন বিনামূল্যে যশোর মুসলিম এইড থেকে। মুসলিম এইড ইকো ইউএসএ’র ফ্রি প্রশিক্ষণের সুযোগ তাকে নতুনভাবে বাঁচতে স্বপ্ন দেখায়। চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সেশনে সিমলা মুসলিম এইড যশোর ক্যাম্পাস থেকে টেইলারিং এন্ড ড্রেস মেকিং এর উপর ৬ মাসের একটি ফ্রি প্রশিক্ষণ কোর্সে ভর্তি হয়ে হাতেকলমে পোশাক তৈরির কাজ শেখেন।
যশোর উপশহর ডি ব্লকের একটি ছোট্ট ভাড়ার বাসায় সিমলা তার মাকে নিয়ে কোনো রকমে মাথা গুজে বসবাস করেন। সিমলার বাবা ১৫ বছর আগে দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র চলে গেছেন। মা পরের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে মেয়েকে এসএসসি পাশ করালেও পরে অভাবের কারণে আর লেখাপড়া হয়নি। ফলে বেশ কয়েক বছর বেকারত্বের সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকার সংগ্রামে যখন সিমলা পর্যুদস্ত ঠিক সে সময় প্রশিক্ষণ পাওয়ার সুযোগ পান।
সিমলা বলেন, মাত্র ৬ মাসের একটি ফ্রি দর্জি প্রশিক্ষণ আমাকে বেঁচে থাকার জন্য নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে। প্রশিক্ষণ চলাকালীন প্রতিবেশীদের সহায়তায় একটি সেলাই মেশিন কিনে বাড়িতেই কাজ শুরু করে দিই। প্রতিবেশীরা খবর পেয়ে বিশেষ করে মহিলারা তাদের প্রয়োজনীয় কাপড় যেমন পেটিকোট, ব্লাউজ, থ্রিপিস, সালোয়ার, কামিজ, বাচ্চাদের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন রকমের তৈরি পোশাকের অর্ডার দিতে থাকে। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি এসব অর্ডারের কাজ করে বেশ কিছু অর্থ জমা করি। সেই টাকা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাপড় কিনে এখন বেশ ভালোভাবে কাজ করছি। ইতিমধ্যে প্রতিবেশীদের প্রায় সব ধরনের তৈরি পোশাকের অর্ডার পাচ্ছি। কিন্তু অর্থের সংস্থান না থাকায় সব কাজ সময়মতো ডেলিভারি দিতে পারছি না। প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান হলে তিনি তার ব্যবসাকে আরো বড় করে তুলতে পারতেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
সিমলা মনে করেন, ফ্রি প্রশিক্ষণ না পেলে হয়তো মায়ের মতো অন্যের বাড়িতে ঝিগিরি করে তাকে জীবিকা নির্বাহ করতে হতো। অন্যের গলগ্রহ হয়ে তাকে সারা জীবন বেঁচে থাকতে হতো। কিন্তু এখন তিনি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচার রাস্তা পেয়েছেন। হাতের কাজ শিখে এখন তিনি অনেকটাই স্বাবলম্বী। নিজের আয়ে এখন তিনি মা ও তার সংসার চালাচ্ছেন। কারোর কাছে অন্নের জন্য হাত পাততে হচ্ছে না। তিনি বলেন, মুসলিম এইড ইকো ইউএসএ’র এই ফ্রি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে তার মতো আরো অনেক অসহায় মানুষ বাঁচার পথ পাবে। পাল্টে যাবে তাদের জীবন যাত্রার মান।
এই ধরনের ফ্রি প্রশিক্ষণ প্রদান করায় সিমলা মুসলিম এইড ও ইকো ইউএসএ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। একইসাথে তার মতো সমাজের অসহায়, নারী পরিত্যক্তা, বিধবা, দরিদ্র বেকার মানুষের কল্যাণে মুসলিম এইড ও ইকো ইউএসএ কর্তৃপক্ষ যদি ফ্রি প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আর্থিক কোনো সহায়তা প্রদান করে তবে তাদের আরো বেশি করে আত্মপ্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন এই সম্ভাবনাময়ী নারী।

Post Top Ad

Responsive Ads Here