যশোর সরকারি এমএম কলেজ অধ্যক্ষের কাণ্ড - যশোর নিউজ - Jessore News

Breaking

Post Top Ad


Post Top Ad

Responsive Ads Here

Sunday, November 24, 2019

যশোর সরকারি এমএম কলেজ অধ্যক্ষের কাণ্ড


প্রায় দুই বছর ধরে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বে প্রফেসর আবু তালেব মিয়া। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি শহরে কোনো বাড়ি ভাড়া নেননি। অথচ সরকারি বেতন ভাতার সঙ্গে নিয়মিত বাড়ি ভাড়া উত্তোলন করছেন।

তিনি বর্তমানে বসবাস করছেন কলেজের মহিলা হোস্টেল সুপারের বাসভবনে। হোস্টেল সুপার শিরিন আক্তারের জন্য বাসাটি বরাদ্দ থাকলেও তিনি থাকেন না। কর্মচারী ও ছাত্রীরা বলছেন, প্রায় এক বছর ধরে অধ্যক্ষ হোস্টেল সুপারের বাসভবনে বাসবাস করেন। এ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ প্রফেসর আবু তালেব মিয়ার দাবি, ‘কয়েক মাস হলো সেখানে থাকেন। তবে সেটিও অনিয়মিত।’ শহরের কোনোদিন বাড়ি ভাড়া নেননি স্বীকার করে বলেন, ‘আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে থেকেছেন।’

এদিকে, অধ্যক্ষ কোনোদিন ভাড়া বাসায় না থেকেও নিয়মিত সরকারি কোষাগার থেকে বাসা ভাড়া বাবদ টাকা উত্তোলন করছেন। তার প্রমাণ মিলেছে জেলা পরিসংখ্যান অফিসের নথিপত্র ঘেটে।

যশোর জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের তথ্যমতে, ২০১৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেছেন প্রফেসর আবু তালেব মিয়া। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে  আগের মাসের বাড়িভাড়া বাবদ ২২ হাজার ১৪৮ টাকা উত্তোলন করেছেন। এরপর ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িভাড়া বাবদ প্রত্যেক মাসে ২৩ হাজার ৩৭ টাকা উত্তোলন করেছেন। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বাড়িভাড়া বাবদ প্রত্যেক মাসে ২৩ হাজার ৯৬১ টাকা উত্তোলন করেছেন। যদিও আগের অধ্যক্ষ প্রফেসর মিজানুর রহমান বাড়িভাড়া বাবদ কোনো টাকা উত্তোলন করেননি।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশর অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ৪ মার্চ জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে কনডেমেশন কমিটির সভায় সরকারি এমএম কলেজ অধ্যক্ষের বাসভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।

গত ১১ নভেম্বর সরেজমিনে দেখা যায়, অধ্যক্ষের বাসভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেখানে নতুন ভবন নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কেয়ারটেকার জানালেন- দুই মাস হলো ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। অধ্যক্ষ প্রফেসর আবু তালেব মিয়া আগে এখানে থাকতেন। বছরখানেক হলো থাকেন না। তিনি এখন মহিলা হোস্টেল সুপারের বাসভবনে থাকেন।

সেখানে গিয়ে দেখা হলো একজন প্রহরীর সঙ্গে। তিনি জানালেন, ‘স্যার এক বছর মতো এখানে থাকেন। স্যারের পরিবার ঢাকায় থাকেন। স্যার একাই থাকেন। এখানে স্যার থাকার আগে ড্রাইভাররা থাকতেন।’

জানতে চাইলে মহিলা হোস্টেল সুপার শিরিন আক্তার বলেন, ‘হোস্টেল সুপারের বাসভবনটি এখন স্টোররুম হিসেবে ব্যবহার হয়। সেখানে তিনি থাকেন না।’

অধ্যক্ষ সেখানে থাকেন কি না জানতে চাইলে শিরিন আক্তার বলেন, ‘কাল কলেজে আসেন কথা বলবো। এখন কথা বলতে পারছি না।’

যশোর জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা জিএম জিল্লুর রহমান বলেন, ‘অধ্যক্ষ প্রফেসর আবু তালেব মিয়া বাড়িভাড়া উত্তোলন করেন। তিনি প্রতিমাসে বেতন শিটে লিখে দেন সরকারি বাসভবনে বসবাস করেন না। এজন্য তার বাড়িভাড়া বাবদ টাকা ছাড় করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘তিনি (অধ্যক্ষ) মহিলা হোস্টেল সুপারের বাসভবন কিংবা সরকারি বাসভবনে থাকেন কি না আমার জানা নেই।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ প্রফেসর আবু তালেব মিয়া বলেন, ‘সরকারি বাসভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। দুই মাস হলো সেটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেখানে কিছুদিন থেকেছি। ক্যাম্পাসের অদূরেই থাকি।’

মহিলা হোস্টেল সুপারের বাসভবনে থাকেন কতদিন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেখানে থাকি এক বছর তো হয়নি, দুই তিন মাস হয়েছে।’

যশোর শহরের কোনোদিন ভাড়া বাসায় থাকেননি উল্লেখ করে অধ্যক্ষ প্রফেসর আবু তালেব মিয়া বলেন, ‘একা মানুষ। শহরের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে থেকেছি। আমি তো মানবেতর জীবনযাপন করছি। যেখানে থাকি, সেখানকার ভাড়াতো ৫শ টাকার বেশি না। বাসাভাড়া তো অনেক। তাহলে কেন ভাড়া তুলবো না।’

তিনি বলেন, ‘এমএম কলেজের প্রিন্সিপালের ক্যাম্পাসের বাইরে থাকার সুযোগ নেই। মহিলা হোস্টেল সুপারের বাসভবনও পরিত্যক্ত। সেখানে থাকার মতো অবস্থা নেই। সেখানে মাঝে মাঝে থাকি।’

Post Top Ad

Responsive Ads Here