১৫ দিন ধরে দাবদাহ চলছে যশোরে। তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে। বৃষ্টি না পড়া ও বাতাসের গতি কম থাকায় গরম অনুভূত হচ্ছে বেশি। এতে হাঁপিয়ে উঠছে মানুষ। এ ভোগান্তি আরো তীব্র করে তুলেছে পানি সংকট। ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় নলকূপে পানি মিলছে না। তবে যশোর পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি, পানির কোনো সংকট নেই।
জানা গেছে, গত বর্ষা মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই যশোরে ভূস্তরের পানির স্তর নেমে গেছে। শুষ্ক মৌসুম বলতে সাধারণত জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত সময়কে গণনা করা হয়। এরই মধ্যে অনেক টিউবওয়েলে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। আর যেগুলোয় পানি উঠছে, তার পরিমাণ খুবই কম।
শহরের বেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা মুদি দোকানি রফিকুল ইসলাম জানান, বাড়ির টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। পাশের ডিপ টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। পৌরসভার লাইন থেকে পানি পড়ছে খুবই ধীরগতিতে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) যশোর পানি পরীক্ষাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি জানান, জানুয়ারি থেকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামতে শুরু করে। এপ্রিলে পানির স্তর সর্বোচ্চ নিচে নেমে যায়। মে মাসে পরিস্থিতি বেশি খারাপ থাকে। তবে এবার একটু আগেভাগেই ডিসেম্বর থেকেই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। গত বর্ষা মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এমনটি ঘটেছে।
তিনি বলেন, সাধারণত বছরে গড় বৃষ্টিপাত হয় ২০৩ সেন্টিমিটার। গতবার বৃষ্টিপাত এর চেয়ে কম ছিল। এ কারণে এবার শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর ২০-২৫ ফুটে নেমে গেছে। এ কারণে টিউবওয়েলে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া কৃষিজমিতে সেচের কারণেও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায়। বৃষ্টি পড়া শুরু হলে পানির স্তর স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তবে এতে মাসখানেক সময় লাগে।
বিএডিসি অফিস (সেচ) সূত্রে জানা যায়, যশোরে গভীর নলকূপের সংখ্যা ১ হাজার ৬০২। এর মধ্যে বৈদ্যুতিক নলকূপ ১ হাজার ৪৮৬ ও ডিজেলচালিত ১১৬টি। এসব নলকূপ দিয়ে ২৫ হাজার ৪৮২ হেক্টর জমিতে পানি দেয়া হয়। অন্যদিকে শ্যালো টিউবওয়েল রয়েছে ৬৩ হাজার ৮৯৯টি। এর মধ্যে বৈদ্যুতিক ৬ হাজার ৭৮৪ ও ডিজেলচালিত ৫৭ হাজার ১১৫টি। এসব শ্যালো টিউবওয়েল দিয়ে ১ লাখ ২৩ হাজার ৪৮২ হেক্টর জমিতে পানি দেয়া হয়।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, আমাদের দেশে বোরো ধান চাষের সময় অনেক পানি অপচয় হয়। দেশে এক কেজি ধান উৎপাদন করতে পানি লাগে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার লিটার। তবে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের মতো দেশে এক কেজি ধান উৎপাদন করতে পানি খরচ হয় এক-দেড় হাজার লিটার।
যশোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান জানান, প্রতিদিন ২৮টি গভীর নলকূপ ও ৬৫০ পাম্প দিয়ে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। পৌর এলাকায় প্রতিদিন নাগরিকদের পানির চাহিদা ২৩ হাজার ৬৩০ কিউসেক মিটার, যার পুরোটাই সরবরাহ করা হচ্ছে। এখানে পানির কোনো সংকট নেই।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী মঞ্জুর মোশারেফ জানান, যেসব এলাকায় পানির সংকট দেখা দেয়, সেসব এলাকায় ৭ হাজার টাকার বিনিময়ে গভীর নলকূপ বসিয়ে সুপেয় পানিসহ গৃহস্থালির কাজে পানির ব্যবস্থা করা হয়। গত বছর জেলার বিভিন্ন এলাকায় গভীর নলকূপ বসিয়ে পানির সংকট মোকাবেলা করা হয়েছে। আশা করি, এবারো সমস্যা হবে না।