সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হয়েছে যশোরের ঝিকরগাছা ও শার্শায় রোহিঙ্গারা শিশুদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে স্থানীয়রা এলাকায় অপরিচিত লোক দেখলেই ‘ছেলেধরা’ সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করছে।
যদিও পুলিশ বলছে, ছেলেধরার বিষয়টি নিছক গুজব। মানসিক প্রতিবন্ধী, অপরিচিত লোকজনের এলাকায় এলোমেলো চলাফেরা দেখলেই গণধোলাই দেয়া হচ্ছে, যা দুঃখজনক।
যদি ছেলেধরা হয়েও থাকে, এভাবে মারপিট করা ঠিক না। তাদের পুলিশে সোপর্দ করার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ।
জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও এলাকায় গুজব ছড়ানো হয়েছে রোহিঙ্গারা শিশু অপহরণ করছে। এটা নিয়ে অভিভাবকরাও আতঙ্কিত। এই আতঙ্কের মধ্যে এলাকায় কোনো অপরিচিতি লোককে এলোমেলো চলাফেরা করতে দেখলেই গণধোলাই দেয়া হচ্ছে।
শুক্রবার সকালে বেনাপোল মাছ বাজার এলাকায় ছেলেধরা সন্দেহে এক নারীকে মারপিট করে এলাকাবাসী। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। একই দিন ঝিকরগাছার জননী সুপার মার্কেট এলাকায় এক যুবককে গণধোলাই দেয় স্থানীয়রা।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে পারবাজার এলাকায় এক যুবককে ছেলেধরা সন্দেহে মারপিট করা হয়। বুধবার রাতে শ্রীরামপুর গ্রামে ও নওয়াপাড়া গ্রামে দুই নারীকে গণপিটুনি দেয়া হয়।
এ ছাড়া মঙ্গলবার বিকেলে বেজিয়াতলা গ্রামে এক ব্যক্তিকে গণধোলাই দেয় স্থানীয়রা। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেশি ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে গুজবে কান না দিয়ে সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়েছেন ঝিকরগাছা থানার ওসি আবদুর রাজ্জাক।
ঝিকরগাছা থানার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে বৃহস্পতিবার জনসচেতনামূলক পোস্ট দিয়েছেন তিনি।
এত উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কতিপয় লোক শিশু পাচারকারী/রোহিঙ্গা বলে অভিহিত করে মানসিক ভারসম্যহীন অজ্ঞাতনামাদের মারপিট করে এলাকায় গুজব সৃষ্টি করছে। এতে সাধারণের জনমনে ভীতি প্রদান করছে। শিশু পাচারকারী দলের সদস্য আটক হয়েছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে ঝিকরগাছা থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে হাজির হয়। বিষয়টি সম্পর্কে উপস্থিত স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ আটককৃত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার কোনো সত্যতা পাওয়া যায় নাই। শিশুদের ধরে নেয়া হয়েছে, এমন কোনো লিখিত কিংবা মৌখিক অভিযোগ কেউ করেনি।
কতিপয় ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব সৃষ্টি করে অহেতুক জনমনে ভীতি সৃষ্টি করছে।
ওসি আরও উল্লেখ করেন, সঠিক তথ্য প্রমাণ ব্যতিত গুজব সৃষ্টি না করে ঘটনা সংক্রান্ত কোনো ব্যক্তির অভিযোগ থাকলে অভিযোগ দায়ের করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। অভিযোগ প্রাপ্তির সাথে সাথে তাৎক্ষণিক বিধি মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যশোর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আনছার উদ্দিন বলেন, কিছু মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব ছড়াচ্ছে। ‘ছেলেধরা’ বলে যাদের বলা হচ্ছে, তদন্তে সত্যতা পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে সচেতনতার জন্য ঝিকরগাছার ওসিকে মাইকিং করতে বলেছি।
তিনি বলেন, যশোরে কোথাও রোহিঙ্গা কিংবা ছেলেধরার কোনো ঘটনা ঘটেনি। গুজব না ছড়িয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সন্দেহজনক কাউকে দেখলেই মারপিট নয়, পুলিশে খবর দিন।